
আনা ভিক্টোরিয়া এসপিনো হলেন বিশ্বের প্রথম নারী, যিনি ডাউন সিনড্রোম হিসেবে জন্ম নিয়েও হয়েছেন আইনজীবী। মেক্সিকোর জাকাতেকাস শহরে, ১৯৯৯ সালের ৩০ জানুয়ারি এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
বাবা মারিসোল দে সান্তিয়াগো ওচোয়া এবং মা জেসুস এসপিনো জাপাটা। মূলত তাদের হাত ধরেই আনার মধ্যে শিল্প আর শিক্ষার প্রতি ভালোবাসা গড়ে ওঠে। সাধারণত ডাউন সিনড্রোম থাকলে শিশুর বিকাশ নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। স্কুল-কলেজে যেন শারীরিক ও মানসিক বৈষম্যের মুখোমুখি হতে না হয় সে জন্য আনা মাধ্যমিকের পড়া শেষ করেন অনলাইনে। এরপর আইন বিষয়ে ভর্তি হন বেএমেরিতা ইউনিভার্সিদাদ অটোনোমা ডি জাকাতেকাসে।
অবশ্য আনার পড়াশোনার পথটি তেমন মসৃণ ছিল না। কারণ, তখন উচ্চশিক্ষার কাঠামো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের উপযোগী ছিল না। এ সময় তার পাশে দাঁড়ান একজন ‘মায়েস্ত্রা সোমব্রা’ বা ছায়াশিক্ষক যিনি আনাকে পড়াশোনায় সাহায্য করেছিলেন এবং তাকে অনুপ্রেরণাও দিতেন। আইনে ডিগ্রি অর্জনের ক্ষেত্রে তিনি আনাকে অনেক সহায়তা করেছিলেন।
আইন বিষয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায়ই আনা প্রতিবন্ধীদের অধিকার সম্পর্কে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।সেই সময় তিনি বিভিন্ন ফোরামে বক্তব্য দিয়ে দেখিয়ে দেন, ডাউন সিনড্রোম থাকলেই কোনো ব্যক্তির পথচলা থেমে থাকতে পারে না। শুধু দরকার সঠিক সুযোগ ও সমর্থন।সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে আইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি।
চিত্রশিল্পী হিসেবেও পরিচিতি আছে আনার। মাত্র কয়েক বছর আগে মেক্সিকো সিটির কংগ্রেস অব দ্য ইউনিয়নের লবিতে অনুষ্ঠিত ‘আমার আকাশ থেকে (Desde mi cielo)’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে তার আঁকা ছবি ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। ডাউন সিনড্রোম থাকা সত্ত্বেও কেউ যে রংতুলিতে এমন বাস্তব আর প্রাণবন্ত ভুবন সৃষ্টি করতে পারেন, তা দেখে বিস্মিত হয়েছিল অনেকে।
ডাউন সিনড্রোম কোনো রোগ নয়, কোষ বিভাজনের সময় একটি অতিরিক্ত ক্রোমোজোম সংযোজিত হওয়ার কারণে সৃষ্ট এক জিনগত বৈচিত্র্য এটি। মানবদেহে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম থাকে। ২১ নম্বর ক্রোমোজোমে আরেকটি অতিরিক্ত ক্রোমোজোম বিদ্যমান থাকে বিধায় এই সমস্যা দেখা দেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি ৮০০ নবজাতকের মধ্যে গড়ে একজন ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত হতে পারে। বিশ্বে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ ডাউন সিনড্রোম নিয়ে বেঁচে আছে। মূলত কোষ বিভাজনের ত্রুটির কারণে এমনটি ঘটে, যাকে অসুখ হিসেবে না দেখে বৈচিত্র্য হিসেবে দেখাই ভালো।আনা এই বৈচিত্র্যকেই সাফল্যে পরিণত করে দেখিয়েছেন। শুধু আইনজীবী হয়ে কোর্ট-কাছারিতে থেমে থাকেননি, বরং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফোরামে শারীরিক এবং জিনগত প্রতিবন্ধকতায় ভোগা মানুষের অধিকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।
তার এ সাফল্য দেখে স্পেন, পেরু, চিলি প্রভৃতি দেশের বিভিন্ন সংস্থাও সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে চাকরির বিভিন্ন প্রস্তাব পর্যন্ত এসেছে আনার। ভবিষ্যতে আইনপ্রণেতা হতে চান আনা। বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়ে প্রতিবন্ধীদের জন্য সহনশীল ও মানবিক সমাজ গড়ে তোলাই তার একান্ত ইচ্ছা।