
বরগুনার এক সরু গলিতে দেখা মেলে এক কিশোরীর—হাতে গিটার কেস, মুখে আত্মবিশ্বাসের দীপ্তি। নাটকের মহড়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কিংবা জলবায়ু সচেতনতা কর্মসূচি—সবখানেই যার dynamic উপস্থিতি। তাঁর নাম মারিয়া আক্তার। বয়স কম হলেও কাজের বহর আর স্বপ্নের পরিধিতে তিনি অনেক বড়। বরগুনা সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের এই ছাত্রী সংগীত, নাটক, আবৃত্তি, খেলাধুলা থেকে শুরু করে সমাজসেবা ও নারী ক্ষমতায়ন পর্যন্ত নানা ক্ষেত্রে রেখে চলেছেন দৃশ্যমান ভূমিকা।
সংগীতচর্চার প্রতি অদম্য টান থেকেই শুরু। কিন্তু বেড়ে ওঠা হয়েছিল রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে, যেখানে মেয়েদের মঞ্চে গান গাওয়া সহজভাবে দেখা হতো না। হারমোনিয়াম ও গিটার নিয়ে বাধা পেয়েছেন বারবার। তারপরও হার মানেননি। বরগুনা শিল্পকলা একাডেমিতে ভর্তি হয়ে নিজেই শেখেন গিটার বাজানো। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৪-এ দেশাত্মবোধক গান, রবীন্দ্রসংগীত এবং হামদ-নাতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রথম হয়ে প্রমাণ দেন প্রতিভার।
সংগীতের পাশাপাশি নাটকেও জ্বলজ্বলে উপস্থিতি মারিয়ার। জাতীয় মঞ্চ নাট্য উৎসবের বকেয়া নাটকে অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন, নাট্য নির্দেশনা কর্মশালা পুতুলের বিয়ে-তে অংশ নিয়েছেন সফলভাবে।
শুধু শিল্পচর্চায় থেমে নেই মারিয়া। তিনি কাজ করছেন স্বাস্থ্য অধিকার ফোরাম, সেফ ও ব্র্যাকের বিভিন্ন প্রকল্পে। নিজের উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশ ইয়ুথ কালচারাল অরগানাইজেশন, যেখানে তরুণ শিল্পী, আবৃত্তিকার ও পরিবেশকর্মীরা এক প্ল্যাটফর্মে কাজ করছেন।
খেলাধুলা থেকে স্কাউটিং, বাইক চালানো থেকে সমাজ সচেতনতা—সবখানেই মারিয়ার পদচারণা দৃষ্টান্তমূলক। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত খেলেছেন ফুটবল, ক্রিকেট ও সাইকেলিং। পেয়েছেন শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড। নিজেই শিখেছেন বাইক চালানো, অন্য মেয়েদেরও করছেন অনুপ্রাণিত।
মারিয়া বলেন, “মেয়েরা কেন শুধু বাইকের পেছনে বসবে? তারাও চালাবে। স্টিয়ারিং হাতে নিলেই আসে আত্মনির্ভরতা।”
মারিয়ার লক্ষ্য চিকিৎসক হয়ে সাধারণ মানুষের সেবা করা, তবে শিল্পের প্রতি তাঁর ভালোবাসা এতটাই গভীর যে এটিকেও সমান গুরুত্ব দিতে চান। তাঁর ভাষায়, “আমি একা নই। আমাদের মতো অনেকেই নিরবে কাজ করে যাচ্ছে। চাই, আমাদের গল্পগুলো সামনে আসুক। আমরা সবাই মিলে বদলে দেবো এই দেশকে।”
তরুণ জলবায়ু সংগঠক খাইরুল ইসলাম মুন্না বলেন, “তারুণ্যের শক্তির নামই মারিয়া। জলবায়ু আন্দোলনে সে এক আশার নাম।”
শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার তানজিলা আক্তার বললেন, “মারিয়া অনেকগুলো রঙে আঁকা এক প্রতিভা। ও অনেক দূর যাবে।”
মারিয়া যেন কেবল একজন মেয়ে নয়, এক চলমান পরিবর্তনের নাম। তাঁর মতো তরুণদের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।