
সুইডেনের ইউকাসার্ভি গ্রামের প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা এই আইস হোটেল যেন কোনো রূপকথার রাজ্য নয়, বরং মানুষের অসাধারণ সৃজনশীলতার জীবন্ত উদাহরণ। বরফ দিয়ে নির্মিত ঘর, আসবাবপত্র, শিল্পকর্ম—সবকিছু এতটাই নিখুঁত ও নান্দনিক যে মনে হয়, মানুষ চাইলে সত্যিই সবকিছু করতে পারে।
উমিয়া শহর থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার উত্তরে, আর্কটিক সার্কেলের কাছেই অবস্থিত ইউকাসার্ভি শীত মৌসুমে বরফে ঢেকে যায়। পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ এখানে তৈরি বরফের এই হোটেল, যা শুধু রাত কাটানোর জায়গা নয়, বরং এক বিশাল শিল্পমঞ্চ। এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বরফের তৈরি এই স্থায়ী–অস্থায়ী স্থাপনা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।
হোটেলের প্রবেশপথেই দর্শনার্থীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৩১৫ ক্রোনার (প্রায় চার হাজার টাকা) মূল্যের টিকিট। ভেতরে ঢুকতেই একের পর এক বরফের কক্ষ। প্রতিটি ঘর থিমভিত্তিক সাজানো। কোনো ঘরে পৌরাণিক চরিত্রের ভাস্কর্য, কোথাও বরফের তৈরি বিশাল মেরু ভালুক। আলো ও সঙ্গীতের সংমিশ্রণে সবকিছু যেন এক কল্পনার জগতে টেনে নেয়। ঘরগুলোতে বরফের বিছানায় বল্গাহরিণের চামড়া, ঠান্ডা প্রতিরোধী ম্যাট্রেস ও স্লিপিং ব্যাগ দিয়ে অতিথিদের জন্য আরামদায়ক ঘুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শুধু ঘুরে দেখাই নয়, বরফের ভাস্কর্য শেখার কর্মশালা, ডগস্লেজিং, স্নোমোবাইল চালানো, অরোরা দেখার মতো শীতকালীন নানা অভিজ্ঞতার প্যাকেজও অফার করে হোটেল কর্তৃপক্ষ। যদিও সেগুলোর মূল্য অনেকটা আকাশছোঁয়া। বাংলাদেশি টাকায় এখানে এক রাত কাটাতে খরচ হতে পারে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত!
১৯৮৯ সালে তোর্নে নদীর পাশ ঘেঁষে গড়ে ওঠা এই হোটেল প্রতিবছর বরফে তৈরি হয়, আবার বসন্তে গলে মিলিয়ে যায় প্রকৃতিতে। এরপর আবার শীত এলে নতুন করে গড়ে ওঠে এই জাদুকরী রাজ্য।
এই অভিজ্ঞতা একবার চোখে না দেখলে বিশ্বাস করাই কঠিন। সত্যিই, মানুষ চাইলে অসম্ভবকেও সম্ভব করতে পারে—এই হোটেল যেন তারই প্রমাণ।