
গত সাত বছরে বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি দ্বিগুণ হয়ে ২৩০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা নতুন বাজার এবং উদ্ভাবনী পণ্যের যোগানের ফল। সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে এই অর্জন এসেছে, যেখানে রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১৩ মিলিয়ন ডলার। যদিও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ২০৫ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই অঙ্ক মাত্র ৪ শতাংশ বেশি।
তবে শিল্প খাতের বিশেষজ্ঞরা আত্মবিশ্বাসী যে, এই ইতিবাচক ধারা বজায় থাকবে। কারণ বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন এবং উদীয়মান বাজারে তাদের কার্যক্রম প্রসারিত করছে। সাত বছর আগেও বাংলাদেশ প্রায় ১৪০টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করত, যা বর্তমানে বেড়ে ১৬৬টি দেশে পৌঁছেছে।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অব্যাহত বিনিয়োগ, নিয়ন্ত্রক মানদণ্ড মেনে চলা এবং দক্ষ কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে স্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যালস খাত আগামী বছরগুলোতে কেবল তার রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বজায় রাখবে না, বরং তা আরও শক্তিশালী হবে।
জানতে চাইলে রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, "এই প্রবৃদ্ধির মূল কারণ হলো নতুন অণু (molecules) এবং ওষুধের প্রবর্তন, যা এখন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হচ্ছে।" তিনি আরও জানান, এই প্রবণতা আগামী বছরগুলোতে আরও ত্বরান্বিত হবে।
প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার জানান, নতুন রপ্তানি গন্তব্যগুলোর মধ্যে রয়েছে মধ্য এশিয়ার স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর কমনওয়েলথ (CIS) সদস্য দেশগুলো যেমন উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান এবং কিরগিজস্তান। তিনি উল্লেখ করেন, এই CIS দেশগুলো বাংলাদেশের ওষুধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাজার হয়ে উঠছে।
নাসের শাহরিয়ার জাহেদীর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, অনেক CIS দেশে নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়াগুলো আরও সহজ হয়েছে, যা বাংলাদেশি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলোকে দ্রুত তাদের পণ্য নিবন্ধন এবং চালু করতে সাহায্য করছে। এই অঞ্চলগুলোতে সাশ্রয়ী ও উচ্চ-মানের জেনেরিক ওষুধের চাহিদা বাড়ছে, যা বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য বৃহত্তর বাজার অংশীদারিত্ব অর্জনের নতুন সুযোগ তৈরি করছে।
তিনি বলেন, "CIS বাজার ছাড়াও, আমরা আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার কিছু অংশেও সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছি। আমাদের কৌশল শুধু ভৌগোলিক বিস্তারই নয়, বরং বিশেষায়িত থেরাপিউটিক বিভাগ অন্তর্ভুক্ত করে আমাদের পণ্য পোর্টফোলিওকে বৈচিত্র্যময় করা।"
তিনি আরো বলেন, "দশ বছর আগে আমরা যা করতে পারতাম না, তা আজ করতে পারছি। আমাদের আধুনিক সরঞ্জাম, দক্ষ বিজ্ঞানী ও ফার্মাসিস্ট এবং উচ্চ-মানের ওষুধ উৎপাদনের জ্ঞান রয়েছে।" তিনি উল্লেখ করেন, ফার্মাসিউটিক্যালস গ্র্যাজুয়েটদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা এই খাতের অগ্রগতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে।
শিল্প বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস খাত ক্রমবর্ধমানভাবে তার পণ্যের পরিসরকে বৈচিত্র্যময় করছে এবং আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক মানদণ্ড (International Regulatory Standards) মেনে চলতে বিনিয়োগ করছে। এই কারণগুলো বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও স্থানীয় কোম্পানিগুলোকে বিদেশী বাজারে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে সাহায্য করেছে।
তারা জানান, গত দশকে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতিষ্ঠানগুলো আধুনিক কারখানা, মান-নিয়ন্ত্রণ ল্যাব এবং দক্ষ কর্মী বাহিনীতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে, যা তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো বাজারে কঠোর নিয়ন্ত্রক মানদণ্ড পূরণে সক্ষম করেছে।