ঢাকা   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২

চাঙা বাজারে অতিমূল্যায়নের শঙ্কা, ডিবিএ চায় দ্রুত নতুন শেয়ারের জোগান

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ১১ জুলাই ২০২৫

চাঙা বাজারে অতিমূল্যায়নের শঙ্কা, ডিবিএ চায় দ্রুত নতুন শেয়ারের জোগান

দেশের শেয়ারবাজারে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বিরাজ করছে। দীর্ঘদিনের দরপতনে হতাশ বিনিয়োগকারীরা এখন আবার নতুন করে আস্থা ফিরে পাচ্ছেন। গত এক মাসেই প্রধান সূচক ৪৫২ পয়েন্ট বেড়েছে, আর দৈনিক শেয়ার কেনাবেচার পরিমাণ ২০০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৭০০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এই ইতিবাচক ধারার মধ্যেও যদি বাজারে নতুন শেয়ারের জোগান না বাড়ে, তাহলে কিছু শেয়ারের দাম অতিমূল্যায়িত হতে পারে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা নতুন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এই উদ্বেগ নিরসনে এবং অবিলম্বে নতুন শেয়ারের জোগান বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানাতে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম এবং ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

বৈঠকে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এবং তিন কমিশনার মোহসীন চৌধুরী, আলী আকবর, এবং ফারজানা লালারুখও উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, "তাদের উদ্বেগের জায়গাটা বুঝি। সমস্যা হলো, আইপিও (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) আনার কাজ বিএসইসির নয়, এটা মার্চেন্ট ব্যাংকের কাজ।" তিনি আরও যোগ করেন, "আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, আগে যেভাবে অতিরঞ্জিত অডিট রিপোর্ট দিয়ে আইপিও এসেছে, সে ধারা এখনও চলুক, এটা কেউ চাই না। ফলে আগে এর সমাধান বের করতে হবে। তা না হলে, শুধু শেয়ারের জোগান বাড়াতে যে কোনো কোম্পানি আনলে আগের মতোই বিপদ বয়ে আনবে।" ড. আনিসুজ্জামান স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন, যাতে বিনিয়োগকারীরা ভুল তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত না নেন।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান আশ্বস্ত করেছেন, শিগগির শেয়ারবাজার সংস্কারের কিছু উদ্যোগ দৃশ্যমান হবে। তিনি জানান, বিএসইসি সংস্কারের সুপারিশ প্রদানে যে টাস্কফোর্স করেছিল, তারা কিছু সুপারিশ দিয়েছে। এর বাইরে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে, যাতে সংস্কারের সবচেয়ে ভালো উপায়টি খুঁজে পাওয়া যায়। বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে আন্তঃসমন্বয় বাড়াতেও কমিটি করা হয়েছে।


তিনি বলেন, "শেয়ারবাজারের মতো ইস্যুতে হুট করে সংস্কার করার ফল ভালো হবে না। আমরা সব দিক বিবেচনায় নিয়ে সংস্কার করার পরিকল্পনা করছি। এ সরকার সব সংস্কার করে যেতে পারবে না। তবে যতটা সম্ভব, শুরু করে যাবে।"

ডিবিএর সভাপতি সাইফুল ইসলাম বৈঠকটিকে "ফলপ্রসূ" বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, "ডিবিএর পক্ষ থেকে শেয়ারবাজারের সার্বিক অবস্থা বিষয়ে মতামত দিয়েছি। সরকারের বেশ কিছু উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছি এবং বলেছি, বাজেটে সরকারের কিছু উদ্যোগ বিনিয়োগকারীরা ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছেন, ফলে তারা বিনিয়োগে আসছেন।" তবে তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, "এখন যেভাবে বিনিয়োগ আসছে, মানুষের আগ্রহ ধরে রাখতে ভালো শেয়ারের জোগান বাড়াতে হবে। অন্যথায় একই শেয়ার কেনাবেচা করতে গিয়ে দর অতিমূল্যায়িত হওয়ার ভয় আছে। অতিমূল্যায়িত বাজার কারও জন্য ভালো নয়। তাই সময় থাকতে নতুন শেয়ারের জোগান বাড়াতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি।"

সাইফুল ইসলাম আরও জানান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী কোম্পানিগুলোর অডিট রিপোর্টের মান নিয়ে যে প্রশ্ন রয়েছে, তা সমাধানের উপায় জানতে চেয়েছেন। ডিবিএ সভাপতি জোর দিয়ে বলেন, "অডিট রিপোর্টের মান বাড়ানোর বিকল্প নেই। তবে সব কোম্পানিরই অডিট রিপোর্ট খারাপ নয়।" তিনি প্রস্তাব করেন যে, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার, সরকারের প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ সহ আরও বেশ কিছু কোম্পানিকে ‘ডিরেক্ট লিস্টিং’ বা সরাসরি তালিকাভুক্তি প্রক্রিয়ায় তালিকাভুক্ত করে শেয়ারের জোগান বাড়ানো সম্ভব।


ডিবিএ সভাপতি শেয়ারবাজার সংস্কারে ১০ মাস আগে টাস্কফোর্স গঠন হলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো সংস্কার কাজ দেখা না যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এছাড়াও, কিছু মিউচুয়াল ফান্ড ম্যানেজারের অর্থ তছরুপ করার প্রমাণ পাওয়ার পর তাদের বিষয়ে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।