ঢাকা   সোমবার ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭ ভাদ্র ১৪৩২

শেয়ারবাজারে ধসের চাপ— ৩১ ব্যাংকের লোকসান ৩৬০০ কোটি টাকা

শেয়ারবাজারে ধসের চাপ— ৩১ ব্যাংকের লোকসান ৩৬০০ কোটি টাকা

দেশের শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিনের মন্দা ও ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে বড় ধাক্কা খেল ব্যাংক খাত। ২০২৪ সালে তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংক সম্মিলিতভাবে পড়েছে প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকার অবাস্তবায়িত লোকসানে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর লোকসান সর্বোচ্চ হলেও বেসরকারি ব্যাংকও ক্ষতি এড়াতে পারেনি। বিদেশি ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে না থাকায় তারা এই ক্ষতির বাইরে রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংকগুলোর লোকসানের মূল কারণ দুর্বল পারফর্ম করা বা ‘জাঙ্ক স্টক’-এ অতিরিক্ত বিনিয়োগ। সবচেয়ে আলোচিত উদাহরণ বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ড। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ২০২৪ সালের আগস্টে বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক সালমান এফ রহমান গ্রেপ্তার হলে এই বন্ডের বাজারমূল্য প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে।

এছাড়া, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও পিপলস লিজিংয়ের মতো সমস্যাগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেও বেশ কিছু ব্যাংক ক্ষতির মুখে পড়ে।

ক্ষতির চিত্র

লোকসানের কারণে বেশিরভাগ ব্যাংককেই প্রভিশন গঠন করতে হয়েছে। তবে ব্যতিক্রমও আছে। মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও প্রাইম ব্যাংক শেয়ারবাজার বিনিয়োগ থেকে লাভ করেছে।

অন্যদিকে সবচেয়ে বড় লোকসান করেছে জনতা ব্যাংক— প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। বেক্সিমকো সুকুক বন্ড, বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড, সামিট পাওয়ার ও বেস্ট হোল্ডিংসে বিনিয়োগের পাশাপাশি প্রায় ৫০ কোটি টাকার জাঙ্ক শেয়ারও এ ব্যাংকের লোকসানের মূল কারণ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষতি করেছে সোনালী ব্যাংক, প্রায় ৩৯৮ কোটি টাকা। এরপর ইস্টার্ন ব্যাংক ৩৫৩ কোটি ও সাউথইস্ট ব্যাংক ৩২৬ কোটি টাকার লোকসানে পড়েছে।
এছাড়া এবি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংক প্রত্যেকেই ২০০ কোটির বেশি লোকসানে পড়েছে।
আর উত্তরা ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ১০০ থেকে ২০০ কোটির মধ্যে ক্ষতি স্বীকার করেছে।

সতর্কবার্তা

বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেটের মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলছেন, ব্যাংকগুলোকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আরও সতর্ক হতে হবে। তিনি বলেন—
“আমানতের বিপরীতে অনিশ্চিত রিটার্নের ঝুঁকি নিয়ে শেয়ারে বিনিয়োগ সঠিক নয়। বিশেষ করে জাঙ্ক স্টকে বিনিয়োগ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এজন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষিত ও পেশাদার জনবল।”

বিশ্লেষকদের মত

বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, ব্যাংকগুলোর এই লোকসান দুর্বল পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপনা ও দক্ষতার ঘাটতিকে স্পষ্ট করে দিয়েছে। কারণ অনেক ব্যাংক শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য অভিজ্ঞ পোর্টফোলিও ম্যানেজারের বদলে ঋণ ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের ব্যবহার করছে। অথচ শেয়ারবাজার একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ক্ষেত্র, যেখানে বিশেষজ্ঞতার বিকল্প নেই।

২০২৪ সালে ডিএসইএক্স সূচক ১৬ শতাংশ কমলেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটিই লোকসানের একমাত্র কারণ নয়। দক্ষ ম্যানেজাররা মন্দা বাজারেও ইতিবাচক রিটার্ন আনতে পারেন। তাদের মতে, পেশাদার ব্যবস্থাপনার অভাবে ব্যাংকগুলো ভবিষ্যতেও আরও বড় ধাক্কার মুখে পড়তে পারে।