আত্মবিশ্বাস এমন এক বিষয় যা নিজের মাঝে গড়ে তুলতে হয়। অন্যের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারি এবং নিজের মধ্যে তার অভাব বোধ করি। মনোবিজ্ঞানী এবং লেখিকা ল্যারিনা কাসে বলেন, 'কোনো কাজে ভালো ফলাফল পাবেন তা ভেবে নেওয়াটা সত্যিকারের আত্মবিশ্বাস নয়। বরং সেখান থেকে ভালো ফলাফল বের করে নিয়ে আসবেই ভাবাটাই আত্মবিশ্বাস'। এখানে নিন ১০টি পরামর্শ যার মাধ্যমে আপনাকে সত্যিকারের আত্মবিশ্বাসী দেখাবে।
১. অফিসের সভায় বক্তব্য রাখা বা বহু দর্শকের সামনে বক্তৃতা দেওয়ার সময় সত্যিকারের আত্মবিশ্বাসী থাকা অতি জরুরি। এসব ক্ষেত্রে চর্চার কোনো বিকল্প নেই। সফল পাবলিক স্পিকার ডেল কার্নেগির পরামর্শ হলো, বাড়িতে একটি স্পিকার এবং মাউথ পিস নিয়ে চর্চা করতে থাকুন। তাহলে সত্যিকার অনুষ্ঠানের সময় কোনো সমস্যা হবে না।
২. প্রশ্ন তখনই করা হয় যখন মানুষ সে সম্পর্কে কিছু জানে না। যদিও না জানাটা কোনো অপরাধ নয়, কিন্তু আত্মবিশ্বাসী থাকতে হলে জানার বিষয়টি প্রশ্ন আকার উত্থাপন করবেন না। যা জানেন না তা বর্ণনা আকারে তুলে ধরে সন্দেহ ছুড়ে দিয়ে বাক্য শেষ করুন।
৩. পাবলিক স্পিকিংয়ের ক্ষেত্রে প্রতি মিনিটে ৯০টি শব্দ উচ্চারণ বক্তব্যের আদর্শ গতি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞ কারমাইন গালো। খুব ধীর বা দ্রুত গতিতে কথা বলা মনে হবে, হয় আপনি কিছু জানেন না অথবা স্নায়ুচাপে ভুগছেন।
৪. অঙ্গভঙ্গি অতি ফলপ্রসূ একটি বিষয়। কথার সঙ্গে হাতের ভঙ্গি বক্তব্যকে শক্তিশালী করে তোলে। এ ক্ষেত্রে আপনার উদ্দীপনা এবং আত্মবিশ্বাস প্রকাশ পায়। আপনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন হবে শ্রোতার।
৫. কিছু শব্দ এবং বাক্যাংশ ফেলে দিন। যেমন- কথার মাঝখানে বললেন, 'এটা আমার ধারণা বা অভিমত'। অথবা 'আমি দুঃখিত', 'আমার মনে হয়', 'পুরোটা জানি না, এখনো এর ওপর কাজ করছি' ইত্যাদি। এ ধরনের কথা-বার্তা আপনার দুর্বলতা বা আত্মবিশ্বাসের অভাব প্রকাশ পায়। এসব কথাকে ঘুরিয়ে দিন। যেমন- 'আমি জানি না, এখনো কাজ করছি' না বলে বলতে পারেন, 'বিষয়টিকে ভিন্ন দিকে নেওয়ার চিন্তা করছি। এতে আরো ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে'।
৬. দেহে পানির অভাব ঘটতে দেবেন না। দেহ ডিহাইড্রেটেড থাকলে কথা বলতে সমস্যা হয়। আবার আচরণে অস্বস্তি চলে আসে। আপনি সহজ নন- এমন আচরণে আপনার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে চাইবেন না দর্শক-শ্রোতারা।
৭. সস্তুষ্টি বা তৃপ্তি প্রকাশ করবেন। বক্তব্যে নেতৃত্বের ভাব আনবেন। আর নেতারা যখন তৃপ্তি প্রকাশ পায় তখন সবার মাঝেই তুষ্টি চলে আসে। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। 'আপনাদের আসার জন্যে ধন্যবাদ' কথাটি বলতেই পারেন।
৮. বক্তব্যের মাঝে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলুন। হাসি শুধুমাত্র দর্শকের মুখেই হাসি ফোটায় তা নয়, আপনার বক্তব্যকে গ্রহণযোগ্য করে তুলবে। হাসির মাধ্যমে সহজেই অন্যের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবেন।
৯. পাবলিক স্পিকারদের ক্ষেত্রে নীরবতা খুব ভয়ের বিষয়। কথা বলতে বলতে কিছু ভুলে যাওয়া বা চিন্তার পথ থেকে হঠাৎ করে সরে যাওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে নীরবতা ভর করতে পারে। এ সময় বেশ অসহায় বোধ হয়। শ্রোতারা দুর্বলতা বুঝতে পারে। কিন্তু নীরবতাকে শক্তিতে পরিণত করতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে কোনো বিষয় তুলে ধরে কিছু স্থানে দর্শকের প্রতিক্রিয়া বোঝার জন্যে নীরব হয়ে যান। এসব ক্ষেত্রে আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী মনে হবে আপনাকে। তথ্য প্রদানের কোনো অংশে বক্তব্য বন্ধ করে দিয়ে দর্শকের মনে উত্তেজনা তৈরি করে দেওয়া দারুণ এক গুণ।
১০. স্মার্টভাবে দাঁড়ান বা বসুন। টানটান বুক এবং মাথা উঁচু করে দাঁড়ালে কেবলমাত্র আপনাকে স্মার্টই দেখাবে তা নয়, কথার ওপর জোর আসবে। আপনার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করবে মানুষ। তাই পিঠ টান করে অবস্থান করুন। কুঁজো ভাব আনলে দুর্বল মনে হবে আপনাকে।
সূত্র : বিজনেস ইনসাইডার