
ত্রিশ পেরোলেই জীবনে আসে দায়িত্বের পাহাড়—চাকরি, সংসার, সন্তান, সমাজ সব মিলিয়ে নিজেকে সময় দেওয়া কঠিন, আর বন্ধুকে সময় দেওয়া যেন বিলাসিতা! অথচ বন্ধুত্ব মানে কেবল আড্ডা নয়, মানসিক শান্তি ও আত্মিক সম্পর্কের এক অপরিহার্য সেতু। এই বয়সে বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখতে চাই আরও যত্ন, আরও বোঝাপড়া। কিন্তু কিছু ছোট ছোট ভুলই নষ্ট করে দিতে পারে বহুদিনের সম্পর্ক। চলুন, জেনে নিই ত্রিশের পর বন্ধুত্বে যেসব ভুল একেবারেই না করাই ভালো।
১. যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া
সময় কম—এই অজুহাতে সম্পর্ক থেকে একেবারে গা-ঢাকা দেবেন না। ছোট্ট একটা মেসেজ, পুরনো কোনো স্মৃতি ভাগ করে নেওয়া কিংবা উৎসবে শুভেচ্ছা—এসবই বন্ধুর মনে করিয়ে দেয়, আপনি এখনও পাশে আছেন। সম্পর্কের সেতু গড়ে তোলা যায় একটুখানি মনোযোগেই।
২. শুধু লিখিত কথায় সীমাবদ্ধ থাকা
টেক্সট পাঠানো সহজ, কিন্তু গলার টোনের যে আবেগ, তা মেসেজে ধরা পড়ে না। মাঝে মাঝে ফোন করে কথা বলুন। কণ্ঠের উষ্ণতা, হাসি বা অভিমান সবই সম্পর্ককে করে জীবন্ত। সম্ভব না হলে একটা ভয়েস মেসেজই অনেক কিছু বলে দেয়।
৩. অভিমানের দেয়াল তুলে দেওয়া
বন্ধু যদি অনেকদিন যোগাযোগ না করে, তাহলে আপনি থেকেই শুরু করুন। হতে পারে, সে মানসিকভাবে চাপের মধ্যে আছে কিংবা নিজেই ভেবে নিয়েছে আপনি আর আগ্রহী নন। মনের কষ্ট জমিয়ে না রেখে একবার অন্তত চেষ্টা করে দেখুন, সম্পর্কটা এখনও বাঁচানো যায় কি না।
৪. বন্ধুর পরিবারকে উপেক্ষা করা
ত্রিশের পর মানুষ কেবল বন্ধুই নয়, সে এখন বাবা-মা, জীবনসঙ্গী বা কর্মজীবীও। বন্ধু সময় দিতে না পারলে তাঁকে দোষারোপ না করে বরং তাঁর পরিবারকে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করুন। এমনকি মাঝেমধ্যে পরিবারসহ দেখা-সাক্ষাৎ হলে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হতে পারে।
৫. শেষ মুহূর্তে পরিকল্পনা বাতিল করা
এই বয়সে সময় বের করাই কঠিন। তাই বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শেষ মুহূর্তে ‘না’ বলবেন না। এটি শুধু আক্ষেপই নয়, তৈরি করে বিরক্তি ও দূরত্ব। প্রয়োজন না হলে প্রতিশ্রুতি ভাঙবেন না, বন্ধু যেমন সময় দিয়েছেন, তেমনি তাঁর সময়ের মূল্য দিন।
ত্রিশের পর বন্ধুত্ব মানে আর শুধু আড্ডা বা খুনসুটি নয়, বরং বোঝাপড়ার পরীক্ষা। ব্যস্ত জীবনে একটুখানি আন্তরিকতা, সময় এবং যোগাযোগের চেষ্টাই পারে সম্পর্ককে বাঁচিয়ে রাখতে। বন্ধুত্ব বেছে নিতে হয় না—তাকে ধরে রাখতে হয় যত্নে, ভালোবাসায়।