
সাবেক মডেল ও অভিনেত্রী নাজনীন আক্তার হ্যাপী আবারও আলোচনায়। একসময় জাতীয় দলের এক ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে শিরোনামে এসেছিলেন হ্যাপী, এবার নিজের স্বামী মুফতি তালহা ইসলামের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে নেটদুনিয়ায় ঝড় তুলেছেন। অভিযোগ, তালহা ইসলাম একে একে ৯টি বিয়ে করেছেন, যেগুলোর অনেকগুলোই স্বল্পমেয়াদি ও গোপন ছিল।
গত সোমবার রাজধানীর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়েরের পর বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে হ্যাপীর আইনজীবী জানান, নড়াইলের সাবেক এমপি মুফতি শহিদুল ইসলামের ছেলে তালহার সঙ্গে ৭ বছর আগে হ্যাপীর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই শুরু হয় একের পর এক মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন। হ্যাপীর অভিযোগ, যৌতুকের জন্য তাঁকে প্রায়ই মারধর করতেন তালহা, সন্তানকেও সেই নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই দেননি তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে হ্যাপী জানান, তিনি বহুবার তালাক চাইলেও প্রতিবারই চরম হুমকি ও ভয়ঙ্কর শর্তের মুখে পড়েছেন—এক কোটি টাকা কিংবা সন্তানকে আজীবনের জন্য ছেড়ে দিতে হবে, এমন দাবিও উঠেছে। মামলা করার পর তালহা ঘরে লোক এনে তাঁর প্রায় ৫০-৬০ লাখ টাকার ব্যবসায়িক মালামাল নিয়ে যান বলে অভিযোগ করেন হ্যাপী।
ফেসবুকে একটি পোস্টে হ্যাপী আরও জানান, নয়টি বিয়ের মধ্যে তিনটির প্রমাণ তার হাতে থাকলেও বাকিগুলো গোপনে সম্পন্ন করেছেন তালহা। তালহার কাছে সন্তানদের দায়িত্বহীনতা এবং বিচ্ছিন্ন আচরণ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
তালহা ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। জানা গেছে, তিনি বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন।
বিশেষজ্ঞ মতামত:
আইনি বিশ্লেষক অ্যাডভোকেট সুলতানা পারভীন বলেন, “একাধিক বিয়ে ইসলামিক শরিয়তের মধ্যে অনুমোদিত হলেও প্রতিটি বিয়েতে নারীর সম্মতি, দায়িত্বশীলতা ও স্বচ্ছতা থাকা জরুরি। স্বল্পমেয়াদে বিয়ে করে ফেলে দেওয়া, নির্যাতন ও ভরণপোষণ বন্ধ রাখার মতো কাজ স্পষ্টতই দণ্ডনীয়। এ ক্ষেত্রে হ্যাপীর দায়েরকৃত মামলায় যেহেতু নির্যাতনের উপাদান রয়েছে, তা যথাযথভাবে তদন্ত করে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।”
সমাজকেও সতর্ক থাকতে হবে:
এই ঘটনার সামাজিক প্রতিক্রিয়া যেমন তীব্র, তেমনি এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে—বিশ্বস্ততা, মূল্যবোধ ও পারিবারিক স্বচ্ছতা ছাড়া সমাজে টেকসই সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। সমাজকে এই ধরনের আচরণ থেকে সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। ধর্মের ব্যাখ্যা ও মর্যাদাকে পুঁজি করে কেউ যেন নারীদের ঠকাতে না পারে, সে বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা এবং আইনি সুরক্ষা আরও জোরদার হওয়া প্রয়োজন।
উপসংহার:
নাজনীন আক্তার হ্যাপীর মুখ খুলতেই যেভাবে সমাজের আড়ালের অনেক কাহিনি প্রকাশ পাচ্ছে, তা এক গভীর পারিবারিক সংকটের চিত্র তুলে ধরে। হ্যাপীর অভিযোগের যথাযথ তদন্ত, বিচার এবং নারীর সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। সামাজিক এবং আইনি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন।