ঢাকা   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শেয়ারবাজারে ভয়াবহ ধস: পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন সূচক, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ও হতাশা

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:২৭, ১৬ মে ২০২৫

শেয়ারবাজারে ভয়াবহ ধস: পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন সূচক, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ও হতাশা

বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ছিল দেশের শেয়ারবাজারের জন্য এক দুঃস্বপ্নের দিন। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক এমনভাবে নেমেছে, যা গত সাড়ে পাঁচ বছরে দেখা যায়নি। দিনের শুরুতে সূচকে কিছুটা ইতিবাচক গতি দেখা গেলেও, বেলা গড়াতেই বড় বিনিয়োগকারীদের টানা বিক্রির চাপে বাজার নিম্নমুখী হতে থাকে। দিন শেষে ডিএসইএক্স সূচক ৫৪.৫৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৪,৭৮১ পয়েন্টে—যা ২০১৯ সালের নভেম্বরের পর সর্বনিম্ন।

ডিএসইর অন্যান্য সূচকগুলোতেও পতনের ছাপ ছিল স্পষ্ট। ডিএসইএস সূচক ১৪.৫৫ পয়েন্ট কমে হয় ১,০৩৮ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২০.৯১ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ১,৭৭০ পয়েন্টে। বাজারে আজ লেনদেন হয়েছে মাত্র ২৯৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, যা সাম্প্রতিককালের মধ্যে অন্যতম কম। অংশগ্রহণকারী ৩৯৫ কোম্পানির মধ্যে মাত্র ৪২টির দর বেড়েছে, বিপরীতে ৩১৭টির দর কমেছে—একতরফা দরপতন বিনিয়োগকারীদের মাঝে ভয় ও হতাশা ছড়িয়ে দিয়েছে।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই চিত্র। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৩৭.৪৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩,৪৭৭ পয়েন্টে, আগের দিনের তুলনায় লেনদেনও কমেছে প্রায় ১ কোটি টাকা।

দর পতনের শীর্ষে:
সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে যমুনা ব্যাংক, যার শেয়ারমূল্য কমেছে ১২.৮৯ শতাংশ। এরপর রয়েছে প্রিমিয়ার লিজিং (৯.৩৮%) এবং বিচ হ্যাচারি (৯.২৮%)। এ ছাড়া আরও রয়েছে সোনারগাঁও টেক্সটাইল, খুলনা প্রিন্টিং, বিকন ফার্মা, মেঘনা পেট, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ও রিজেন্ট টেক্সটাইল।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে:
পজিটিভ তালিকায় রয়েছে সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স (৭.৩৮%), মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স (৭.৩২%) ও সি পার্ল বিচ রিসোর্ট (৬.০৫%)। বাটা সুজ, বিডি ওয়েল্ডিং, সান লাইফ ইন্স্যুরেন্স, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি কোম্পানির দর কিছুটা বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞ পরামর্শ:
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান দরপতনের মূল কারণ হলো বাজারে দীর্ঘমেয়াদি আস্থার অভাব, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অনুপস্থিতি এবং নীতিনির্ধারকদের কার্যকর ভূমিকার ঘাটতি। বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ধরে রাখার বদলে লোকসানেই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এমন অবস্থায় বাজারকে স্থিতিশীল করতে হলে তাৎক্ষণিকভাবে নিচের পদক্ষেপগুলো জরুরি:

নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে আস্থা ফিরিয়ে আনতে স্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা।

বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে প্রণোদনা।

দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের জন্য করছাড় ও অন্যান্য সুবিধা।

তদারকি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকর পদক্ষেপ।

বিনিয়োগকারীদের জন্য পরামর্শ:
আতঙ্কে পড়ে দ্রুত শেয়ার বিক্রি না করে মৌলভিত্তির কোম্পানিতে অবস্থান ধরে রাখা উচিত।
যেসব কোম্পানির ব্যালেন্সশিট মজবুত ও ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে, সেসবেই ধীরে ধীরে বিনিয়োগ করা ভালো।
বাজার পর্যবেক্ষণ করে stop-loss এবং target price ঠিক করে বিনিয়োগ কৌশল গ্রহণ করা উচিত।
 বাজার পুনরুদ্ধারের আগেই ‘panic sell’ এ গা না ভাসিয়ে কৌশলী হতে হবে।

উপসংহার:
বর্তমান পরিস্থিতি দেশের পুঁজিবাজারের জন্য এক জটিল সংকেত। বাজারের এই ধস দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যদি এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়া হয়। বিনিয়োগকারীদের ধৈর্য ধরতে হবে এবং বাজারে স্বচ্ছতা ও আস্থার জন্য নীতিনির্ধারকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি।