
ফ্লাডলাইট নিভে গেছে, গ্যালারি খালি, স্কোরবোর্ডে জ্বলজ্বল করছে ২-১ ব্যবধানে সিঙ্গাপুরের কাছে হারের হতাশা। এমন রাতেই নিঃশব্দে শেষ হলো বাংলাদেশ ফুটবল দলের ভুটান-সিঙ্গাপুর মিশন। ম্যাচ শেষে রাত ১০টার দিকে জাতীয় দল ফিরে যায় ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে। ক্যাম্প ভাঙার প্রস্তুতি শুরু হয় তখনই।
হোটেলের পরিবেশে নেমে আসে নিস্তব্ধতা। ফুটবলারদের চোখেমুখে হতাশা। কেউ ফোনে ডুবে, কেউ চুপচাপ লাগেজ গোছাচ্ছেন। রাত ১১টায় হোটেলে প্রবেশ করে দেখা মেলে মাঠে না নামা ডিফেন্ডার ঈসা ফয়সালের। তাঁর মুখেও পরাজয়ের ছাপ, “হারের পর আসলে কিছু বলার থাকে না,” বলেই থেমে যান তিনি।
এক এক করে নামতে থাকেন ইব্রাহিম, সুমন রেজা, ফাহিমরা। সবার নির্দেশনা, বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে হোটেল ছাড়তে হবে। ফুটবলারদের মনোবল ধরে রাখতে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল, সহসভাপতি ফাহাদ করিম উপস্থিত ছিলেন হোটেলে, পাশে দাঁড়িয়ে দিয়েছেন সাহস।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে টিম ম্যানেজার আমের খান জানান, “হামজা ও শমিতের জন্য পুলিশ কর্ডন নিশ্চিত করেছি। ওদের তো একা ছাড়া যাবে না।” হামজা চৌধুরী ও শমিত সোম এক ফ্লাইটেই (টার্কিশ এয়ারলাইনস) ভোররাতে ঢাকা ছাড়েন। হামজা ফিরে যান ইংল্যান্ডে, শমিত কানাডায়। অভিষেক ম্যাচেই আলো ছড়ানো শমিতের চোখেমুখে ছিল আত্মতৃপ্তি।
ক্যাম্প ভাঙার এ রাতে আরও আলোচনায় ছিলেন জামাল ভূঁইয়া। ম্যাচে এক মিনিটও মাঠে নামেননি, প্রশ্ন করলে বললেন, “কোচকে জিজ্ঞাসা করুন। তিনিই ভালো জানেন।” তাঁর সংক্ষিপ্ত উত্তরে স্পষ্ট অসন্তোষ।
লবিতে দেখা গেল সোহেল রানা, যিনি ভুটান ম্যাচে গোল করেছিলেন। সিঙ্গাপুর ম্যাচে খেলার সুযোগ না পাওয়ার বিষয়ে কথা বলতে চাইলেন না। তারিক কাজী, যিনি ইনজুরির পরও মাঠে লড়েছেন, বললেন, “কেন মাঠ ছাড়ব? দেশের জন্যই তো খেলি।” এই কথাগুলো যেন রাতের নীরব হোটেল লবিতেও দেশপ্রেমের প্রতিধ্বনি হয়ে বাজছিল।
অন্যদিকে, রাকিব ও ফাহামিদুলের আচরণ নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের ভেতরে অসন্তোষের গুঞ্জন ছিল। ম্যাচ শুরুর আগেই ‘তামিম নিখোঁজ’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে মাঠে প্রবেশ করা নিয়েও আলোচনা তৈরি হয়। জানা যায়, এটি ছিল যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে এবং এএফসির অনুমোদিত একটি বার্তা।
জাতীয় দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা আজই স্পেনে ফিরে যাচ্ছেন, স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। সহকারী ও গোলকিপার কোচদের ফেরার সময় এখনও নির্ধারিত হয়নি। সেপ্টেম্বরে অনূর্ধ্ব-২৩ দলের খেলা রয়েছে, কাবরেরা থাকবেন কি না—তাও অনিশ্চিত।
হোটেলের ঘরগুলো ফাঁকা হয়ে গেছে, খেলোয়াড়েরা যার যার গন্তব্যে ফিরে গেছেন। আপাতত জাতীয় দলের কোনো ক্যাম্প নেই। পরবর্তী ম্যাচ অক্টোবর মাসে, এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে হংকংয়ের বিপক্ষে। এক ম্যাচ ঢাকায়, এক ম্যাচ হংকংয়ে।
বিদায়ের আগে হামজা ও শমিত বলে গেলেন, “দেখা হবে অক্টোবরে।” এই বাক্যেই যেন জমা রইল প্রতীক্ষা, আবার মাঠে নামার প্রত্যয়। আবার দেশের হয়ে লড়াই করার অঙ্গীকার।