
হামজা চৌধুরী কেবল একজন ফুটবলার নন, বরং বাংলাদেশের ফুটবলে এক যুগান্তকারী অনুপ্রেরণা। তার উপস্থিতি যেন জাতীয় দলে নতুন প্রাণ ফিরিয়ে এনেছে। ঢাকার এএফসি বাছাইপর্বের ম্যাচে মাঠে তার পারফরম্যান্স দেখেছে পুরো জাতি। সেখান থেকে ফিরে এবার নতুন দিগন্তের দিকে তাকিয়ে আছেন এই মিডফিল্ডার। শেফিল্ড ইউনাইটেডে ধারে খেলার মেয়াদ শেষ, সামনে তার সম্ভাব্য গন্তব্য হতে পারে ইউরোপের পরাশক্তি অলিম্পিয়াকোস।
শেফিল্ডে কত আয় করেছেন হামজা?
ফুটবলারদের পারিশ্রমিক সাধারণত গোপন রাখা হলেও ফুটবল-বাণিজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান Capology-এর তথ্যে উঠে এসেছে, শেফিল্ড ইউনাইটেডে থাকা অবস্থায় হামজা প্রতি সপ্তাহে ৪১,৪৭৩ ইউরো অর্থাৎ প্রায় ৫৭.৮২ লাখ টাকা বেতন পেয়েছেন।
-
প্রতিদিন আয়: ৫,৯২৪ ইউরো (প্রায় ৮.২৬ লাখ টাকা)
-
মোট আয় (১২৪ দিন): ৭,৩৪,৫৭৬ ইউরো (প্রায় ১০.২৫ কোটি টাকা)
এই সময়ে তিনি ক্লাবটির সর্বোচ্চ বেতনভোগী খেলোয়াড় ছিলেন, ব্রুস্টার ও দিয়াজের সঙ্গে। এর আগের ক্লাব লেস্টার সিটিতে তাঁর সাপ্তাহিক আয় ছিল অনেক কম—১৭,৭৭৪ ইউরো।
কোন ক্লাবে খেলবেন আগামী মৌসুমে?
শেফিল্ডে ধারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় হামজাকে ফিরতে হচ্ছে তার মূল ক্লাব লেস্টার সিটিতে, যেখানে চুক্তির মেয়াদ আছে আরও দুই বছর। কিন্তু সেখানে খেলার সম্ভাবনা এখনো অনিশ্চিত, কারণ নতুন কোচ রুড ফন নিস্টলরয়ের অধীনে হামজাকে সেভাবে খেলানোর আগ্রহ দেখা যায়নি।
অন্যদিকে, গ্রিসের জায়ান্ট অলিম্পিয়াকোস তাকে চুক্তিবদ্ধ করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। যদি তারা চুক্তি করে, তাহলে হামজার জন্য এটা হবে এক নতুন অধ্যায়—প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার সুযোগ।
অলিম্পিয়াকোসে যাওয়ার সম্ভাবনা কতটা?
গ্রিক মিডিয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে যে অলিম্পিয়াকোস কোচ হোসে লুইস মেন্দিলিবার হামজার খেলা দেখে মুগ্ধ। তাদের খেলার কৌশলের সঙ্গে হামজা সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অলিম্পিয়াকোস ২০২৪–২৫ মৌসুমে গ্রিক লিগের চ্যাম্পিয়ন, ফলে সরাসরি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলবে। এই সুযোগ হামজার ক্যারিয়ারে দারুণ এক মাইলফলক হয়ে উঠতে পারে।
ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত
হামজার বাবা মোরশেদ দেওয়ান জানিয়েছেন, তিনি নিজেও জানেন না ছেলে আগামী মৌসুমে কোথায় খেলবেন।
“সে বলল, জানি না। তাই এখনই বলতে পারছি না।”
তবে লেস্টার শহরের সংবাদমাধ্যমে জানা গেছে, শেফিল্ড যদি প্রিমিয়ার লিগে উঠতো, তাহলে হামজাকে কিনে নেওয়ার পরিকল্পনা করতো। কিন্তু সান্ডারল্যান্ডের কাছে হেরে সেই স্বপ্ন ভেঙে গেছে।
ট্রান্সফারমূল্য ও আর্থিক দিক
-
বর্তমান বাজারমূল্য: ৪৫ লাখ ইউরো (প্রায় ৬২.৯০ কোটি টাকা) – সূত্র: Transfermarkt
-
লেস্টার বিক্রি করতে চাইছে: তবে এখনো কোনও ক্লাব আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়নি।
এই মুহূর্তে তারকা মিডফিল্ডার হিসেবে হামজার সামর্থ্য এবং বাজারমূল্য মিলিয়ে দেখলে দেখা যায়, তার জন্য ইউরোপের বড় ক্লাবগুলো আগ্রহী হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
বিশ্লেষণ ও পরামর্শ:
বাংলাদেশি ফুটবলপ্রেমীদের জন্য হামজার ভবিষ্যৎ ক্লাব বেছে নেওয়া এক উত্তেজনাকর বিষয়।
যদি তিনি অলিম্পিয়াকোসে যান—
-
প্রথমবারের মতো ইউরোপের শীর্ষ প্রতিযোগিতায় খেলার সুযোগ পাবেন।
-
বেতনও হতে পারে আরও বেশি।
-
আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ হবে।
তবে থেকে গেলে লেস্টারে—
-
তিনি হয়তো মূল একাদশে সুযোগ না-ও পেতে পারেন, কোচের আগ্রহ কম।
-
আবার নতুন কোচ যদি দৃষ্টি দেন, তবে সেখানেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ থাকছে।
সুতরাং, ক্যারিয়ার উন্নয়ন ও চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য হামজার ইউরোপিয়ান ক্লাবে (যেমন অলিম্পিয়াকোস) যাওয়াটাই হবে সবচেয়ে যৌক্তিক ও কৌশলী পদক্ষেপ।
বাংলাদেশি ফুটবলের ভবিষ্যতের জন্যও এটি হবে গর্বের বিষয়।