
আজ ১৭ মে—বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে এক গর্বের দিন। ১৯৯৮ সালের এই দিনে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে এসেছিল বাংলাদেশের প্রথম জয়। ভারতের হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজে কেনিয়াকে ৬ উইকেটে হারিয়ে দেশের ক্রিকেটে এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছিল টাইগাররা। ১৯৮৬ সালে প্রথম ওয়ানডে খেলার ১২ বছর পর এই জয়টি ছিল দেশের ক্রিকেটভক্তদের বহু প্রতীক্ষিত স্বপ্ন পূরণের দিন।
সেই ম্যাচে বাংলাদেশের দুই ওপেনার মোহাম্মদ রফিক ও আতহার আলী খানের ১৩৭ রানের জুটি ছিল জয়ের ভিত্তি। রফিক খেলেছিলেন ৮৯ বলে ঝকঝকে ৭৭ রানের ইনিংস, আর আতহার করেছিলেন ৪৭ রান। রফিক বোলিংয়েও ছিলেন দুর্দান্ত—নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। এমন পারফরম্যান্সে ম্যাচসেরার পুরস্কারও ছিল তার প্রাপ্য। কেনিয়ার দেওয়া ২৩৭ রানের লক্ষ্য ১২ বল হাতে রেখে ছুঁয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
আজ সেই ঐতিহাসিক জয়ের ২৭ বছর পূর্তিতে ফিরে দেখা যাক, তখনকার সেই একাদশের সদস্যরা এখন কোথায়—
আতহার আলী খান ধারাভাষ্যকার হিসেবে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন দেশের প্রায় প্রতিটি সিরিজে। পাকিস্তান সুপার লিগসহ নানা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেও শোনা যায় তার কণ্ঠ।
মোহাম্মদ রফিক কোচিংয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কিছুদিন। এখন কেরানীগঞ্জে নিজের ব্যবসা নিয়েই বেশি ব্যস্ত।
মিনহাজুল আবেদীন ছিলেন বিসিবির প্রধান নির্বাচক। বর্তমানে বিসিবির প্রোগ্রাম হেড হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আমিনুল ইসলাম এখন অস্ট্রেলিয়ায় পরিবারসহ বসবাস করছেন। আইসিসি ও এখন এসিসিতে ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন।
আকরাম খান, ঐতিহাসিক আইসিসি ট্রফি ও প্রথম ওয়ানডে জয়ের অধিনায়ক, ছিলেন বিসিবির পরিচালক ও ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান। এখনও ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে যুক্ত।
নাঈমুর রহমান রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। দুবার হয়েছেন সংসদ সদস্য। তবে সাম্প্রতিক সময়ের রাজনীতিতে তেমন সক্রিয় নন।
খালেদ মাহমুদ বিসিবির নানা দায়িত্বে ছিলেন। ম্যানেজার, কোচ, পরিচালক—সব ভূমিকাতেই দেখা গেছে তাঁকে। এখনো ক্রিকেটে সক্রিয়।
এনামুল হক খেলোয়াড়ি জীবন শেষে আম্পায়ারিংয়ে যুক্ত হন। এখন আম্পায়ারদের কোচ হিসেবে কাজ করছেন।
হাসিবুল হোসেন বিসিবিতে বয়সভিত্তিক দলের নির্বাচক হিসেবে কাজ করছেন। টিভি আলোচনাতেও খেলা নিয়ে বিশ্লেষণ করেন।
খালেদ মাসুদ এখন ব্যবসায়ী। রাজশাহী ও ঢাকায় রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করেন। বিসিবির পরিচালকের নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন।
মোর্শেদ আলী খান আইসিসির আম্পায়ার প্যানেলে আছেন। টি–টোয়েন্টি ও নারী ক্রিকেটে অনেক ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। গান গাওয়ার প্রতিভাও রয়েছে তাঁর।
সেই ম্যাচের স্কোরসামারি:
কেনিয়া: ২৩৬/১০ (৪৯ ওভারে)
বাংলাদেশ: ২৩৭/৪ (৪৮ ওভারে)
ফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা: মোহাম্মদ রফিক
১৯৯৮ সালের সেই জয় শুধু এক ম্যাচ নয়, ছিল এক যুগান্তকারী মুহূর্ত—যেখানে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের আত্মবিশ্বাসী যাত্রা। আজ সেই জয়ের নায়করা ছড়িয়ে আছেন নানা অঙ্গনে, কিন্তু ইতিহাসের পাতায় তাঁদের নাম চিরস্থায়ী হয়ে আছে।