ঢাকা   শনিবার ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পুঁজিবাজারের প্রধান চার খবর

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৩৯, ১৭ মে ২০২৫

পুঁজিবাজারের প্রধান চার খবর

ডিএসইর  বাজার মূলধন কমেছে ৩ হাজার কোটি টাকা

টানা সূচক পতনের মধ্য দিয়ে দেশের শেয়ারবাজারে শেষ হয়েছে বিদায়ী সপ্তাহের (১১-১৫ মে) লেনদেন। মূলধনের দিক থেকে বড় ধস দেখা গেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। সপ্তাহের ব্যবধানে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা, যা বাজারে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

ডিএসইর সাপ্তাহিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সপ্তাহ শেষে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৪৯ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহের ৬ লাখ ৫২ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা থেকে কমে গেছে ২ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা বা ০.৪৫ শতাংশ।

সূচকও ছিল টানা নিম্নমুখী।

ডিএসইএস সূচক কমেছে ৩৫.৩৯ পয়েন্ট বা ৩.২৯ শতাংশ।সূচকের পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৯৯ কোটি ৫ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৪১৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।

এক সপ্তাহে লেনদেন কমেছে ১ হাজার ১১৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১৫৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বা ৩২.৭৮ শতাংশ।

সপ্তাহজুড়ে লেনদেনেও ধীরগতি ছিল লক্ষ্যণীয়। ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৯৯ কোটি ৫ লাখ টাকা, যা আগের সপ্তাহের ২ হাজার ৪১৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা থেকে কমেছে ১ হাজার ১১৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বা প্রায় ৪৬ শতাংশ।

প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩২৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, আগের সপ্তাহে যা ছিল ৪৮৩ কোটি ১২ লাখ টাকা। অর্থাৎ গড়ে লেনদেন কমেছে ১৫৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বা ৩২.৭৮ শতাংশ।

সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে ৩৯৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৫০টি, কমেছে ৩২২টি এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৪টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)

অন্যদিকে, সপ্তাহ ব্যবধানে দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ও সিএসসিএক্স যথাক্রমে ১.৬৫ শতাংশ ও ১.৫১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৩৪৭৭.১৬ পয়েন্টে ও ৮২৪০.২৪ পয়েন্টে।এছাড়া সিএসই-৫০ সূচক ১.২৭ শতাংশ ও সিএসই-৩০ সূচক ১.৪৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১০৪৯.৬৪ পয়েন্টে ও ১১৪৯৮.০২ পয়েন্টে।

আর সিএসআই সূচক কমেছে ১.৬৫ শতাংশ। সূচকটি অবস্থান করছে ৮৬৯.০২ পয়েন্টে।চলতি সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, যা এর আগের সপ্তাহে ছিল ৫২ কোটি ৪১ লাখ টাকা। সপ্তাহ ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ১৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

সিএসইতে সাপ্তাহিক লেনদেন কমে হয়েছে ৩৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, আগের সপ্তাহে যা ছিল ৫২ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ফলে সিএসইতেও লেনদেন কমেছে ১৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

সপ্তাহজুড়ে সিএসইতে ৩০০টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৭৪টির, কমেছে ২০৩টির, এবং অপরিবর্তিত ছিল ২৩টির।

বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনীতির সামগ্রিক অনিশ্চয়তা, বিনিয়োগকারীদের আস্থার ঘাটতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিষ্ক্রিয়তা বাজারকে চরম মন্দার দিকে ঠেলে দিয়েছে। বাজার স্থিতিশীল করতে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

লেনদেনের শীর্ষে বীচ হ্যাচারি

বিদায়ী সপ্তাহে (১১-১৫ মে) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল বীচ হ্যাচারি। সাপ্তাহিক বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহজুড়ে প্রতিদিন গড়ে কোম্পানিটির ১৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা ছিল ডিএসইর মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এনআরবি ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ।

তৃতীয় স্থানে রয়েছে বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার, যার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ১৮ লাখ টাকার শেয়ার, যা ডিএসইর লেনদেনের ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ।

সাপ্তাহিক লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে স্কয়ার ফার্মার ৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, এবি ব্যাংক ফাস্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, মিডল্যান্ড ব্যাংকের ৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকের ৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, সিটি ব্যাংকের ৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা, কেডিএস অ্যাক্সেসরিজের ৬ কোটি ০২ লাখ টাকা এবং ফাইন ফুডের ৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার শেয়ার।

দর পতনের শীর্ষে শাইনপুকুর সিরামিকস

বিদায়ী সপ্তাহে (১১-১৫ মে) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সবচেয়ে বেশি দরপতনের শিকার হয়েছে শাইনপুকুর সিরামিকস। সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর কমেছে ২১ দশমিক ৯২ শতাংশ। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে যেখানে শেয়ারদর ছিল ২১ টাকা ৯০ পয়সা, বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে তা নেমে আসে ১৭ টাকা ১০ পয়সায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে দর কমেছে ৪ টাকা ৮০ পয়সা।

দর পতনের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মিডল্যান্ড ব্যাংক। কোম্পানিটির শেয়ারদর এক সপ্তাহে ২০ শতাংশ কমে ৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৮০ পয়সায়।

তৃতীয় স্থানে রয়েছে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, যার শেয়ারদর কমেছে ১৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে দর ছিল ১৮ টাকা ৭০ পয়সা, যা নেমে দাঁড়িয়েছে ১৫ টাকা ২০ পয়সায়।

সাপ্তাহিক দর পতনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর কমেছে এসআলম ক্লোড রোল্ড স্টিলের ১৮.৭২ শতাংশ, এনাজিংপ্যাকের ১৭.৩৪ শতাংশ, বীচ হ্যাচারির ১৭.২৯ শতাংশ, এনআরবি ব্যাংকের ১৬ শতাংশ, সোনারগাঁ টেক্সটাইলের ১৫.৬৭ শতাংশ, প্রগ্রেসিভ লাইফের ১৪.৯৯ শতাংশ এবং বারাকা পাওয়ারের ১৪.৪০ শতাংশ।

দর বৃদ্ধির শীর্ষে সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স 

বিদায়ী সপ্তাহে (১১-১৫ মে) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স। ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর ৩০ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেড়েছে। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে যার শেয়ারদর ছিল ৩০ টাকা ১০ পয়সা, তা বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ টাকা ৩০ পয়সায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে শেয়ারদর বেড়েছে ৯ টাকা ২০ পয়সা।

দর বৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ফাস্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারদর সপ্তাহজুড়ে ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ বেড়ে ৩ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ৪ টাকা ১০ পয়সায় উন্নীত হয়েছে।

তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে সমতা লেদার। আগের সপ্তাহে এর শেয়ারদর ছিল ৪৫ টাকা ৩০ পয়সা, যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ টাকা ৮০ পয়সায়। অর্থাৎ দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ বা ৪ টাকা ৫০ পয়সা।

সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের ৯.৫৪ শতাংশ, বিজিআইসির ৭.৫৬ শতাংশ, ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের ৭.২০ শতাংশ, সী পার্ল রিসোর্টের ৬.৫৭ শতাংশ, নূরানী ডাইংয়ের ৬.৪৫ শতাংশ, উত্তরা ব্যাংকের ৫.২৪ শতাংশ এবং মাগুরা মাল্টিপ্লেক্সের ৫.০৯ শতাংশ।