ঢাকা   মঙ্গলবার ১০ জুন ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গভর্নরের মত উপেক্ষা করে ট্রাম্পের ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন: ‘বিপজ্জনক নজির’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা

বিশেষ প্রতিবেদন

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:২৮, ৯ জুন ২০২৫

আপডেট: ২৩:৩১, ৯ জুন ২০২৫

গভর্নরের মত উপেক্ষা করে ট্রাম্পের ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন: ‘বিপজ্জনক নজির’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা

লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভ দমন করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসমের প্রকাশ্য আপত্তি সত্ত্বেও এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়, যা যুক্তরাষ্ট্রে একটি বিরল এবং বিতর্কিত ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধুমাত্র রাজ্য সরকারের ক্ষমতা খর্ব নয়, বরং দীর্ঘদিনের সাংবিধানিক রীতিনীতিরও লঙ্ঘন।

বিক্ষোভ ঠেকাতে নেওয়া এই কঠোর পদক্ষেপের নেপথ্যে রয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী অভিযান, যার বিরোধিতা করে শুক্রবার থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ। এ সময় অন্তত ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ব্যবহৃত হয়েছে টিয়ার গ্যাস ও ফ্ল্যাশ ব্যাং গ্রেনেড। কিন্তু ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে অভিযোগ করেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ, তাই কেন্দ্রীয় সরকারকেই এখন ব্যবস্থা নিতে হবে।

‘টাইটেল টেন অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস কোড’ অনুযায়ী ট্রাম্পের আদেশে বলা হয়, ন্যাশনাল গার্ড এখন সরাসরি প্রেসিডেন্টের অধীনে থাকবে এবং কেন্দ্রীয় বিভিন্ন সংস্থা ও ফেডারেল সম্পদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। ১৯৯২ সালের রডনি কিং দাঙ্গার পর এবারই প্রথম ট্রাম্প এই ধারায় সেনা নিয়োগ করলেন, যা গভর্নরের অনুমতি ছাড়াই গার্ড মোতায়েনের নজির গড়ল।

তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো এটিকে ভয়াবহ সংকেত হিসেবে দেখছে। সিএনএনের বিশ্লেষক জুলিয়েট কায়েম বলেন, ‘গণতান্ত্রিক দেশে সামরিক বাহিনী দিয়ে বিক্ষোভ দমন অগ্রহণযোগ্য। ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে থাকা সেনারা বলপ্রয়োগের জন্য প্রশিক্ষিত, জন–অসন্তোষ মোকাবিলায় নয়।’ তাঁর মতে, এই পদক্ষেপ আরও সহিংসতা উসকে দিতে পারে।

বিশ্লেষকদের ধারণা, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইচ্ছাকৃতভাবে গভর্নর নিউসমের সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব উসকে দিচ্ছেন। নিউসম ডেমোক্র্যাট আর ট্রাম্প রিপাবলিকান হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই ক্যালিফোর্নিয়াকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে আসছেন ট্রাম্প। বিভিন্ন সময় রাজ্যের জন্য বরাদ্দ ফেডারেল তহবিল বাতিলের হুমকি, দাবানল ও বন্যা মোকাবিলায় রাজ্যের সক্ষমতা নিয়ে কটাক্ষ, এমনকি ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ট্রান্সজেন্ডার অংশগ্রহণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তহবিল কেটে নেওয়া—সবই রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের অংশ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

সিএনএনের আরেক বিশ্লেষক অ্যাসটেড হার্নডনের মতে, ‘হোয়াইট হাউস এই উত্তেজনা ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়াচ্ছে। কারণ ট্রাম্প প্রশাসন ফেডারেল শক্তিকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কোণঠাসা করতে চায়।’

এদিকে, মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের সিদ্ধান্তকে ‘জনগণের অধিকার হরণ ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের হাতিয়ার’ বলে অভিহিত করেছে। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক পল ও’ব্রায়েন বলেন, ‘এই পদক্ষেপ জনগণের সুরক্ষার জন্য নয়, বরং ভিন্নমত দমন ও মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলা মানুষদের টার্গেট করার কৌশল।’

এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র ও সংবিধানিক ভারসাম্যের জন্য এক গভীর পরীক্ষার সংকেত হিসেবে দেখছেন অনেকে।