মাথা ও গলার গুরুতর ক্যানসারের চিকিৎসায় ইমিউনোথেরাপি পদ্ধতিতে নতুন ওষুধ ব্যবহারে চমকপ্রদ সাফল্য এসেছে। যুক্তরাজ্যের গবেষকেরা বলছেন, অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে পেম্ব্রোলিজুমাব নামের ওষুধ প্রয়োগে রোগীদের ক্যানসারমুক্ত থাকার সময় প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে ক্যানসার ফিরে আসার ঝুঁকিও অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। এটি গত দুই দশকে এ ধরনের জটিল ক্যানসার চিকিৎসায় সবচেয়ে বড় অগ্রগতির ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষণায় অংশ নেওয়া ৪৫ বছর বয়সী লরা মার্সটনের ক্যানসার ধরা পড়ে ২০১৯ সালে, জিবে। তাঁর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ছিল মাত্র ৩০ শতাংশ। বড় অস্ত্রোপচারে জিব ও গলার লিম্ফ নোড সরিয়ে ফেলার পর তাঁকে আবার খাওয়াদাওয়া ও কথা বলতে শিখতে হয়েছে। তবে অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে নতুন ইমিউনোথেরাপি নেওয়ার পর তিনি সুস্থ হয়ে এখন পূর্ণকালীন কাজ করছেন। লরা বলেন, "আমি এখনো বেঁচে আছি—এটাই অলৌকিক। এই চিকিৎসা আমার জীবন ফিরিয়ে দিয়েছে।"
গবেষণায় ২৪টি দেশের ১৯২টি হাসপাতালে মোট ৩৫০ জন রোগীর শরীরে এই ওষুধ প্রয়োগ করা হয় অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে। অন্যদিকে, সমানসংখ্যক আরেকটি দলকে দেওয়া হয় প্রচলিত চিকিৎসা। দেখা গেছে, যাঁরা নতুন ইমিউনোথেরাপি পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ক্যানসার ফিরে আসার ঝুঁকি ১০ শতাংশ কম এবং গড় ক্যানসারমুক্ত সময় দ্বিগুণ হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে গবেষণা নেতৃত্ব দেওয়া অধ্যাপক কেভিন হারিংটন জানান, অপারেশনের আগে ওষুধটি প্রয়োগে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা টিউমারকে চিনে ফেলে ও লড়াইয়ের শক্তি তৈরি করে। পরে অপারেশনের পরও ওষুধ চালিয়ে গেলে ক্যানসার প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও বাড়ে। এতে শরীরের অন্য অংশে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিও কমে যায়। আর ক্যানসার একবার ছড়িয়ে পড়লে তার চিকিৎসা কঠিন হয়ে পড়ে বলেও তিনি সতর্ক করেন।
এই সাফল্যকে বিজ্ঞানীরা দেখছেন নতুন আশার আলো হিসেবে। আমেরিকান সোসাইটি অব ক্লিনিক্যাল অনকোলজির বার্ষিক সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হচ্ছে। আর পুরো কার্যক্রমটি পরিচালনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি মেডিকেল স্কুল এবং অর্থায়ন করেছে ওষুধ কোম্পানি এমএসডি।
