
ইসলামের সূচনালগ্ন থেকেই শিক্ষা ছিল একটি কেন্দ্রীয় অনুষঙ্গ। কোরআনের প্রথম শব্দ “ইকরা”—অর্থাৎ “পড়ো”—ই জ্ঞানের প্রতি ইসলামের গভীর গুরুত্বকে প্রতিফলিত করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) দারুল আরকাম ও আসহাবে সুফফার মাধ্যমে সংগঠিত শিক্ষাব্যবস্থার সূচনা করেন। কালের পরিক্রমায় বায়তুল হিকমার মতো গবেষণাকেন্দ্র থেকে ইবনে সিনা, আল-খাওয়ারিজমি, আল-ফারাবির মতো জ্ঞানতাপসেরা জন্ম নিয়েছেন। সে যুগে ধর্মীয় ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞান একত্রে শেখানো হতো, ইবাদতের অঙ্গ হিসেবে।
কিন্তু ঔপনিবেশিক শাসন ও পাশ্চাত্য শিক্ষার আগ্রাসনে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা ছিটকে পড়ে মূলধারা থেকে। ফলে একদিকে জন্ম নেয় প্রযুক্তিহীন ধর্মীয় শিক্ষা, অন্যদিকে জন্ম নেয় ধর্মহীন আধুনিক শিক্ষা। এতে মুসলিম সমাজ বিভক্ত হয়ে পড়ে আত্মিকতা ও কর্মদক্ষতার মাঝে।
আধুনিক চ্যালেঞ্জের মুখে ইসলামী শিক্ষার পুনর্গঠনে যেসব পদক্ষেপ জরুরি:
✅ পাঠ্যক্রমে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও ভাষা অন্তর্ভুক্ত করা
✅ অনলাইন ও ডিজিটাল মাধ্যমে ইসলামী শিক্ষার বিস্তার
✅ AI, Bioethics, ইসলামিক অর্থনীতি ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণার প্রসার
✅ শিক্ষকদের ICT স্কিল ও প্রশিক্ষণ
✅ চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা করতে কারিকুলামকে মানসম্পন্ন ও আন্তর্জাতিক করতে হবে
মালয়েশিয়া ও তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, কিংবা Bayyinah, Qalam, Yaqeen Institute-এর মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এই রূপান্তরের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশেও দাখিল ও আলিম স্তরে কিছু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, যা আরও সম্প্রসারণযোগ্য।
সমাধানের পথ: একটি সমন্বিত কারিকুলাম গড়ে তুলতে হবে যেখানে কোরআন-হাদিসের পাশাপাশি গণিত, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি থাকবে। প্রযুক্তি ও গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ইসলামী শিক্ষাকে আধুনিক পরিপ্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিক করতে হলে আমাদের দরকার গ্লোবাল ভাষায় উপস্থাপিত, গবেষণাভিত্তিক ও যুগোপযোগী এক নতুন শিক্ষা আন্দোলন।
? ইসলামিক শিক্ষাকে যদি আধুনিক বিশ্বে টিকে থাকতে হয়, তবে তার প্রয়োজন আধুনিক প্রযুক্তি, ভাষা ও চিন্তাধারার সঙ্গে একটি দৃঢ় সংযোগ—যার ভিত্তি হবে কোরআনের “ইকরা”-বাণী।