ঢাকা   বৃহস্পতিবার ০১ মে ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

“অভ্যুত্থানের পর নারীরা কোথায়?”

নারী ও নারী উদ্যোক্তা

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২০:৫১, ৩০ এপ্রিল ২০২৫

“অভ্যুত্থানের পর নারীরা কোথায়?”

রাষ্ট্র সংস্কারের ধারাবাহিকতায় নারীদের উন্নয়ন ও সুরক্ষা নিয়ে গঠিত কমিশন সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার কাছে ৪৩৩টি সুপারিশ জমা দিয়েছে। কিন্তু এই প্রতিবেদন ঘিরে সমাজের একাংশে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও প্রতিক্রিয়া। ইসলামি সংগঠন, আলেম সমাজ ও ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো শুধু প্রতিবেদনের বিরোধিতাই নয়, বরং পুরো কমিশন বাতিলের দাবি তুলেছে। অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত, পারিবারিক কাঠামো ধ্বংস, ও তথাকথিত ‘পশ্চিমা সংস্কৃতি’ চাপিয়ে দেওয়ার আশঙ্কা।

অথচ, রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে পুলিশের সংস্কার থেকে শুরু করে সংবিধান সংশোধন পর্যন্ত একাধিক কমিশনের সুপারিশ এসেছে—কোনোটিই এভাবে বাতিলের দাবিতে মুখর হয়নি। প্রশ্ন হচ্ছে, নারীদের জন্য কিছু সুপারিশ এলেই এত প্রতিক্রিয়া কেন?

মাত্র কয়েক মাস আগেও অভ্যুত্থানকালে নারীদের সাহসী অংশগ্রহণ নতুন বাংলাদেশে তাঁদের অবস্থান নিয়ে আশাবাদ সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু আজ তাঁদের সেই অংশগ্রহণ প্রায় বিস্মৃত। প্রতিদিনের আলোচনায় নারীরাই যেন হয়ে উঠেছেন অনুপস্থিত। আন্দোলনে যারা সামনের সারিতে ছিলেন, তাঁদের কেউ কেউ এখন ভুগছেন শারীরিক-মানসিক সহিংসতায়, কেউ বহিষ্কৃত, কেউ অবজ্ঞার শিকার।

চট্টগ্রামের আন্দোলনকারী সুমাইয়া শিকদার ও শাকিরা সাঞ্জুর উদাহরণ সামনে এনে দেখা যাচ্ছে, নারীরা শুধু হারিয়ে যাননি, বরং তাঁদের হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঢাকার বাইরের আন্দোলনকারীদের নিয়ে নেই কোনো গণমাধ্যম কভারেজ, সাক্ষাৎকার বা স্বীকৃতি।

এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠে—রাষ্ট্র কি নারীর রাজনীতি ও সংস্কারকে আসলে ভয় পাচ্ছে? ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের পরে যে ‘ভিন্ন বাংলাদেশ’-এর স্বপ্ন দেখা হয়েছিল, সেই স্বপ্নে নারীদের স্থান কি শুধুই অলংকার?

সরকার নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশে নিরুত্তাপ, অথচ সমাজে নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও হুমকি দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন স্পষ্ট পদক্ষেপ—নারীদের ক্ষমতায়নের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন এবং আন্দোলনের নারীদের মূলধারার রাজনীতিতে স্থান দেওয়া।

সমাজ ও রাষ্ট্রের যাঁরা নারীর কোণঠাসা অবস্থায় স্বস্তি বোধ করেন, তাঁদের জন্য সময় এসেছে বুঝে নেওয়ার—এই ‘স্থিতিশীলতা’ ভাঙা ছাড়া সামনে এগোনোর আর কোনো রাস্তা নেই।

এই পরিস্থিতিতে প্রশ্নটা খুব সোজা—জনগণের বিপুল সমর্থন নিয়ে গঠিত সরকার কি নারীর মর্যাদা রক্ষায় সত্যিকার প্রতিরোধ গড়তে পারবে?