ঢাকা   বৃহস্পতিবার ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২

জুলাই সনদে শেষ মুহূর্তে ঐকমত্য কমিশনের

রাজনীতি

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৯:০৩, ৮ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই সনদে শেষ মুহূর্তে ঐকমত্য কমিশনের

জুলাই সনদ প্রণয়নের পর তার বাস্তবায়ন কীভাবে হবে? রাজনৈতিক দলগুলোকে মতৈক্যে আনতে ধারাবাহিক বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেই বৈঠকের শেষ টানতে চাইছেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

আজ বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার শুরুতেই তিনি বলেছেন, ‘আজকে জাতীয় জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে গত বৈঠকের অসামপ্ত আলোচনা শেষ করলে আজকে কমিশনের শেষ দিন হবে। আমরা আজকে চূড়ান্তের জায়গাটাতে যেতে চাই।’

ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানসহ নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করে। সেই কমিশনগুলোর সুপারিশমালা নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় গত ফেব্রুয়ারিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ ধারাবাহিক বৈঠক চালিয়ে যান। নানা আলোচনা-বিতর্কের পর নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রশ্নে দলগুলো একমত হলেও তার বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে এখনো মতভেদ রয়ে গেছে।

এ অবস্থায় আজ বিকেলে ঢাকার বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান–সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পঞ্চম দিনের আলোচনায় বসেন আলী রীয়াজসহ কমিশনের সদস্যরা।

আলী রীয়াজ বলেন, ‘যখন আমরা ১১ সেপ্টেম্বর প্রথম বসি, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের মনেই সংশয় ছিল, আমরা এক জায়গায় আসতে পারব কি না...আমাদের এই প্রচেষ্টায় অনেক দূর অগ্রগতি হয়েছে এই অর্থে যে গণভোটের ক্ষেত্রে আমরা সবাই এক জায়গায় আসতে পেরেছি। বাকি পথটা আমরা সবাই মিলে নিঃসন্দেহে অতিক্রম করে এক জায়গায় পৌঁছাতে পারব।’

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ‘মৌলিক ঐকমত্য’ তৈরি হয়েছে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, কমিশন এখন চূড়ান্ত কাঠামো নির্ধারণে কাজ করছে।

কমিশন চায় সব দলের মতামত ও আপত্তির পর্যালোচনার ভিত্তিতে চূড়ান্ত প্রস্তাব তৈরি করে সরকারকে সুপারিশ করতে। আলী রীয়াজ দলগুলোর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের পক্ষ থেকে যদি সুনির্দিষ্ট, সুস্পষ্ট একটি জায়গায় একটি প্রস্তাব আসে, কমিশন সরকারকে সেটাই উপস্থাপন করবে এবং কমিশন চাইবে যে সেটাই বাস্তবায়িত হোক।’

কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিচ্ছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। কমিশন সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুব মিয়া রয়েছেন বৈঠকে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন) মনির হায়দার করছেন সঞ্চালনা।

জুলাই সনদে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ থাকা বিষয়গুলোও বিবেচনায় নেওয়ার ওপর জোর দিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, সব দল একভাবে সম্মতি না দিলেও জনগণের চূড়ান্ত মত, অর্থাৎ গণভোট নেওয়ার সময় এসব আপত্তির বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে জানাতে হবে।

আলী রীয়াজের ভাষ্যে, ‘জুলাই জাতীয় সনদে যে বিষয়গুলো আছে, সেখানে যেহেতু কিছু “নোট অব ডিসেন্ট” আছে, সেটাকে আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। সব কটিই একভাবে বিবেচনা করা যাবে, তা আমরা মনে করছি না। কারণ হচ্ছে যেসব রাজনৈতিক দল “নোট অব ডিসেন্ট” দিয়েছে, তারা তাদের অবস্থানের দিক থেকে দিয়েছে, তাদের শুধু দলীয় অবস্থান নয়, আমরা আশা করি যে তারা অন্যান্য বিবেচনা থেকেও দিয়েছে। সনদের বিষয়ে জনগণের সম্মতি নিশ্চিত করার সময় এসব ভিন্নমত যেন যথাযথভাবে জানানো হয়, সেটিই হবে গণভোটের মূল উদ্দেশ্য।’

১০ অক্টোবরের মধ্যে সরকারের কাছে চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দিতে চায় কমিশন। ১৬ অক্টোবরের মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে বলে জানান আলী রীয়াজ।