
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নবনির্বাচিত মেয়র হিসেবে নিজেকে শপথ গ্রহণে অবিলম্বে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, সরকার যদি দ্রুত শপথের ব্যবস্থা না করে, তাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে যাবে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নগর ভবনে অবস্থানরত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
উল্লেখ্য, ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের রায় ও নির্বাচন কমিশনের গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে করা লিভ টু আপিল আজ আপিল বিভাগ পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে। এই রায়ের পরপরই ইশরাক সরকারের প্রতি কঠোর অবস্থান নেন।
ইশরাক বলেন, “সর্বোচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে আমার শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা তাদের বাধ্যবাধকতা। টালবাহানা করলে এটিকে আদালত অবমাননার শামিল হিসেবে ধরা হবে।” তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন কমিশন আমাকে জয়ী ঘোষণা করেছে, গেজেটও প্রকাশিত হয়েছে। এতদিনে শপথ অনুষ্ঠান হয়ে যাওয়া উচিত ছিল।”
নগর ভবনে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ইশরাক বলেন, “সরকার একটি মেয়রকে শপথ পড়াতে ব্যর্থ হয়েছে, তাহলে ৩০০ এমপিকে কীভাবে শপথ পড়াবে—এ নিয়ে জনগণের মনে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।” তিনি জানান, এই ব্যর্থতা কেবল প্রশাসনিক নয়, বরং গণতন্ত্রের প্রতি সরকারের উদাসীনতারই প্রতিফলন।
নগর ভবনের প্রধান ফটকে ইশরাকের সমর্থক ও সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। ১৪ মে থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি বৃষ্টির মাঝেও চলেছে। ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে চলমান আন্দোলনে কর্মচারীদের বড় একটি অংশ যুক্ত হয়েছেন। এর ফলে নগর ভবনের কার্যক্রম দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে অচল হয়ে আছে। নগরবাসী সেবা না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন।
ইশরাক বলেন, “আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই শান্তিপূর্ণভাবে এগোচ্ছি। কিন্তু সরকার ও প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণই আজকের এ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। আমি বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হওয়ার কারণেই আমার সঙ্গে এই বৈষম্য করা হয়েছে।”
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ডিএসসিসি নির্বাচন হয়, যেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস জয়ী হন। তবে নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক। ২০২৩ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মাধ্যমে শুরু হয় রাজনৈতিক পালাবদলের নতুন অধ্যায়। এরপর নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ২৭ মার্চ রায় দিয়ে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে এবং নির্বাচন কমিশন ২৭ এপ্রিল সেই গেজেট প্রকাশ করে। আজ আপিল বিভাগ সে গেজেট বহাল রাখায় শপথ অনুষ্ঠান নিয়ে আইনি কোনো বাধা নেই বলেই মনে করছেন তিনি।
ইশরাক হোসেনের বক্তব্যে পরিস্কার, তিনি প্রশাসনিক জটিলতার অবসান চেয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে চান, তবে প্রয়োজনে তা আরও তীব্রতর হবে। এখন দেখার বিষয়, সরকার দ্রুত শপথ অনুষ্ঠান আয়োজন করে কি না, নাকি রাজধানী ঢাকায় নগরসেবা স্থবিরতার পাশাপাশি রাজনৈতিক উত্তেজনাও বাড়তে থাকে।