
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম নগর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ধারাবাহিক সন্ত্রাসী হামলা শিক্ষাঙ্গনের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে বলে অভিযোগ তুলেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী)। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের খালাসের প্রতিবাদে আয়োজিত শান্তিপূর্ণ মশাল মিছিলে হামলা, বাধা ও উসকানিমূলক তৎপরতা চালানোর দায় ছাত্রশিবিরের ওপরই দিয়েছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো।
গতকাল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিলের সময় শিবিরের বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালমান সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ বৃহস্পতিবার এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করছে। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের জায়গা। সেখানে এই ধরনের উগ্রতা বরদাশতযোগ্য নয়।”
অন্যদিকে ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এক বিবৃতিতে পাল্টা অভিযোগ করে বলেছে, “বামপন্থীরা সহাবস্থানের পরিবেশ নষ্ট করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরাই তাদের মিছিলের প্রতিবাদ জানিয়েছে।” তবে ছাত্র ফ্রন্টের দাবি, এই ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ নাম করে প্রকৃতপক্ষে পরিকল্পিতভাবে শিবিরের পক্ষ থেকেই হামলা চালানো হয়েছে।
ছাত্র ফ্রন্টের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ২৭ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ২৮ মে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে শিবির ও জামায়াতপন্থী ছাত্রদের ধারাবাহিক হামলায় বহু ছাত্রনেতা আহত হয়েছেন। চট্টগ্রামে হামলার শিকার হন ছাত্র ফ্রন্টের নগর সভাপতি রিপা মজুমদার, অর্থ সম্পাদক অর্পিতা নাথ, ছাত্র কাউন্সিলের সহসভাপতি এ্যানি চৌধুরীসহ আরও অনেকে।
বিশেষভাবে নারী আন্দোলনকারীদের ওপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত লাঞ্ছনার ঘটনাকে “জাতির বিবেককে নাড়া দেওয়া” বলে উল্লেখ করেছে ছাত্র ফ্রন্ট। বিবৃতিতে বলা হয়, “একজন নারী আন্দোলনকারীকে যেভাবে লাথি মারা হয়েছে, তা শুধু শারীরিক হামলা নয়, বরং তা নারী নেতৃত্বের মনোবল ভাঙার অপচেষ্টা।”
ছাত্র ফ্রন্টের মতে, এসব হামলা ও বাধা দেওয়ার চেষ্টা সরাসরি ‘জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে’ এবং সন্ত্রাস-দখলদারত্বের রাজনীতিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা। অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেছে, “জুলাই অভ্যুত্থানে যে ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ উঠেছিল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, সেটিকে ধরে রাখতে শিক্ষার্থী ও ছাত্রসমাজকে আরও জোরালোভাবে সোচ্চার হতে হবে।”
শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ রক্ষা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বজায় রাখতে ছাত্র ফ্রন্ট সারা দেশের ছাত্র-জনতার প্রতি ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে।