ঢাকা   শুক্রবার ০৬ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তে গাবতলী হাট ইজারায় ডিএনসিসির ক্ষতি ৫ কোটি টাকার বেশি, লাভবান ‘পছন্দের’ ইজারাদার!

স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তে গাবতলী হাট ইজারায় ডিএনসিসির ক্ষতি ৫ কোটি টাকার বেশি, লাভবান ‘পছন্দের’ ইজারাদার!

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) একমাত্র স্থায়ী পশুর হাট গাবতলী হাটের ইজারা নিয়ে প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম মেনে দরপত্র ডেকে সর্বোচ্চ ২২ কোটি ২৫ লাখ টাকার প্রস্তাব পেয়েও ‘প্রক্রিয়াগত ভুল’ দেখিয়ে তা বাতিল করে খাস আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এক মাসের বেশি সময় খাস আদায়ের পর দ্বিতীয় দফায় আবার দরপত্র আহ্বান করে ডিএনসিসি। এবার সর্বোচ্চ প্রস্তাব ছিল ২৫ কোটি টাকা, তবে সেই প্রতিষ্ঠান ইজারা নিতে অপারগতা জানালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা—১৫ কোটি ৭১ লাখ টাকার—পক্ষকে ইজারা দেওয়া হয়। এতে গাবতলী হাটে ডিএনসিসির সরাসরি আর্থিক ক্ষতি দাঁড়ায় প্রায় ৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। যদিও খাস আদায়ে সংগৃহীত প্রায় ৯৮ লাখ টাকা যোগ করলেও সংস্থাটির মোট ক্ষতি দাঁড়ায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার বেশি।

এ ক্ষতির প্রভাব শুধু সিটি করপোরেশনেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। প্রথম দফায় ইজারা হলে ভ্যাট ও আয়কর মিলিয়ে সরকারের রাজস্ব আসত প্রায় ৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। অথচ দ্বিতীয় দফায় এই পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩ কোটি ৯২ লাখ টাকায়—যা আগের তুলনায় ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা কম। অর্থাৎ সরকারি কোষাগারও ক্ষতির মুখে পড়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের ‘পছন্দের’ ব্যক্তি সর্বোচ্চ দরদাতা না হওয়ায় প্রক্রিয়াগত ভুলের অজুহাতে প্রথম দরপত্র বাতিল করা হয়। শেষ পর্যন্ত ইজারা পান বিএনপি-ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি এস এ সিদ্দিক ওরফে সাজু, যিনি গাবতলী হাটে আগেই অঘোষিতভাবে হাসিল আদায় করছিলেন বলে সরেজমিনে দেখা গেছে।

টিএইচ এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ দর দিয়েও ইজারা নেয়নি, তাদের মালিক আলী হায়দার নিজেই জানিয়েছেন, সময়ের অভাব ও অনভিজ্ঞতার কারণে ঝুঁকি না নিয়ে সরে গেছেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, তাকে ইজারা থেকে সরাতে ‘চাপ’ দেওয়া হয়েছিল।

ডিএনসিসির প্রশাসক এজাজ দাবি করেছেন, প্রথমে খাস আদায়ের পরিকল্পনা ছিল, তবে ঈদের সময়ে তা পরিচালনা কঠিন হবে—এই আশঙ্কা করায় টিমের পরামর্শে ইজারার পথ বেছে নিতে হয়। যদিও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) মতে, উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার নীতি লঙ্ঘন করে এমন আর্থিক ক্ষতি অনভিপ্রেত ও তদন্তসাপেক্ষ। সরকারের উচিত এই ঘটনায় জবাবদিহি নিশ্চিত করে অনিয়মের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।


ডিএনসিসির প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অযোগ্যতা, রাজনৈতিক প্রভাব এবং স্বার্থসংশ্লিষ্টতার কারণে রাষ্ট্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ঘটনায় কেবল একটি ইজারা নয়—নষ্ট হয়েছে জনআস্থা, প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা ও সুশাসনের ধারণা। জনগণের টাকায় পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠানে এমন স্বেচ্ছাচারিতার দায় এড়ানো উচিত নয়—এটি সংশ্লিষ্টদের জন্য সতর্কবার্তা হয়ে উঠুক।