
ভারতের হায়দরাবাদ, লাখনৌ কিংবা রামপুর—বিরিয়ানি মানেই মাংস ও মসলার সমারোহ, সেখানে আলুর অস্তিত্বই নেই। অথচ বাংলা অঞ্চলের বিরিয়ানিতে আলু যেন আত্মার মতো মিশে আছে। এক টুকরো আলু ছাড়া বিরিয়ানি অনেক বাঙালির কাছেই অসম্পূর্ণ। এই আলু কখন, কীভাবে বিরিয়ানিতে এল—তা ঘিরে রয়েছে নানা কাহিনি ও তত্ত্ব।
বহুল প্রচলিত একটি গল্প বলছে, ১৮৫৬ সালে নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ কলকাতায় নির্বাসনে এসে মাংসের ঘাটতি পুষিয়ে দিতে বিরিয়ানিতে আলু যোগ করেন। যদিও নবাবের উত্তরসূরিরা এ গল্প উড়িয়ে দিয়েছেন, বলছেন—নবাবের কাছে মাংসের অভাব ছিল না, বরং আলু ছিল নতুন ও দামি সবজি, আর তা নবাবি রুচির এক পরীক্ষামূলক সংযোজন ছিল।
আরেক তত্ত্ব অনুযায়ী, বাঙালির তুলনামূলক দুর্বল হজমশক্তির কথা মাথায় রেখে বিরিয়ানিকে হালকা করতে যুক্ত হয়েছিল আলু। কারণ, আলু মশলা শোষণ করে রান্নার ভার কমায়। এই কারণে ধীরে ধীরে এটি জনপ্রিয় হয়।
তৃতীয় মত বলছে, আলু মূলত স্বাধীনতার পরে ষাটের দশকে বিরিয়ানিতে জায়গা করে নেয়। তখন বিরিয়ানি মধ্যবিত্তের কাছে পৌঁছাতে শুরু করে, এবং কম খরচে পরিবেশনযোগ্য করার জন্য মাংসের জায়গা কিছুটা দখল করে নেয় আলু।
ইতিহাস বলে, আলু উপমহাদেশে আসে পর্তুগিজদের হাত ধরে, আর বাংলায় এর চাষ শুরু হয় ১৮২০ সালে। নবাবের বাবুর্চিরা পরে কলকাতার বাবুদের জন্য রান্না করতে গিয়ে তাদের স্বাদ ও চাহিদা মেটাতেই আলু ব্যবহার শুরু করেন।
সব মিলিয়ে বলা যায়, বাঙালির বিরিয়ানিতে আলুর জায়গা পাওয়া ছিল একাধিক সামাজিক, ঐতিহাসিক এবং স্বাদগত ঘটনার সম্মিলিত ফল। আজ সেই আলু শুধু একটি উপাদান নয়—বরং এটি বাঙালির রসনা, রুচি ও রীতির অনন্য প্রতীক। এখন তো অনেকেই বলেন, বিরিয়ানির ‘আসল হিরো’ হচ্ছে সেই আলু।