ঢাকা   রোববার ০৮ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পানিতে থাকলেই আঙুল কেন কুঁচকে যায়? জানালেন বিজ্ঞানীরা

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৫:৫০, ৭ জুন ২০২৫

পানিতে থাকলেই আঙুল কেন কুঁচকে যায়? জানালেন বিজ্ঞানীরা

দীর্ঘ সময় পানিতে থাকলে বা সাঁতার কাটলে হাত ও পায়ের আঙুল কুঁচকে যায়—এই অভিজ্ঞতা আমাদের সবারই আছে। অনেকেই মনে করেন, ত্বক পানি শোষণ করে ফুলে উঠেই কুঁচকে যায়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, সত্যিটা একেবারে ভিন্ন।

যুক্তরাষ্ট্রের বিংহ্যামটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার গাই জার্মান ও তাঁর গবেষক দল জানাচ্ছেন, আঙুল কুঁচকে যাওয়ার পেছনে মূল কারণ আমাদের স্বায়ত্তশাসিত স্নায়ুতন্ত্র। গবেষণায় দেখা গেছে, আঙুলের ত্বক পানির সংস্পর্শে এলে ঘামের নালি খুলে যায়, ফলে পানি টিস্যুর ভেতরে প্রবেশ করে এবং লবণের অনুপাত কমিয়ে দেয়। মস্তিষ্ক তখন সংকেত পাঠায় রক্তনালিকে সংকুচিত করতে। এর ফলে ত্বকের নিচে রক্ত সরবরাহ কমে গিয়ে ত্বক হালকা সঙ্কুচিত হয় এবং তাতে সৃষ্ট হয় কুঁচকানো বলিরেখা।

গাই জার্মান বলেন, “আমারও আগে ধারণা ছিল, শুধু পানির কারণে এমন হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এটি একেবারেই স্নায়বিক প্রতিক্রিয়া।” তাঁর গবেষণায় দেখা যায়, ৩০ মিনিট পানিতে আঙুল ভিজিয়ে রাখার পর সৃষ্ট কুঁচকানো প্যাটার্ন ২৪ ঘণ্টা পর আবার দেখা যায়, যার মানে এটি একটি পুনরাবৃত্ত আচরণ—প্রতিবার একই রকমভাবে রক্তনালি প্রতিক্রিয়া জানায় বলেই এমন ঘটে।

এই কুঁচকানো ত্বকের একটি চমৎকার কার্যকারিতা রয়েছে। গবেষকেরা বলেন, পানির নিচে কুঁচকানো ত্বক মসৃণ ত্বকের তুলনায় বেশি গ্রিপ দেয়। এতে পিছলে যাওয়ার আশঙ্কা কমে, হাঁটা-চলা সহজ হয়। এমনকি দেখা গেছে, যাদের আঙুলের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের আঙুলে কুঁচকানো হয় না—যার মধ্য দিয়ে প্রমাণ মেলে যে এটি শুধুমাত্র পানির প্রভাবে নয়, বরং স্নায়বিক সংকেতের ফলেই ঘটে।

এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে Journal of the Mechanical Behavior of Biomedical Materials-এ। নতুন এই তথ্য আমাদের দীর্ঘদিনের ভুল ধারণা ভেঙে দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছে—শরীরের ছোট ছোট প্রতিক্রিয়ার পেছনেও থাকে জটিল স্নায়বিক বিজ্ঞান।