
আজকাল ওজন কমানো বা স্বাস্থ্য সচেতনতার দৌড়ে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের ডায়েট মেনে চলার চেষ্টা করছেন—কিটো, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং, মেডিটেরিয়ান, ওম্যাড, ভেগান কিংবা ড্যাশ। কিন্তু সত্যিটা হলো, সব ডায়েট সবার জন্য নয়। কারও শরীরে যেটা ভালো কাজ করে, অন্যজনের জন্য সেটা বিপজ্জনকও হতে পারে। তাই প্রশ্নটা হলো—আপনার উপযোগী ডায়েট কোনটি?
সুস্থভাবে বাঁচতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন সুষম খাদ্যাভ্যাস। প্রতিদিন সঠিক পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেল এবং পানি গ্রহণ করা চাই। কারণ শরীরের প্রতিটি কাজের পেছনে এই উপাদানগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যাভ্যাস সরাসরি প্রভাব ফেলে আমাদের ঘুম, ওজন, মেজাজ এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর। ভুল খাদ্যাভ্যাস ডেকে আনতে পারে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ, স্থূলতা, এমনকি ক্যানসারও।
ওজন কমাতে চাইলে ব্যায়ামের পাশাপাশি ডায়েট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে বলেন, ওজন নিয়ন্ত্রণে ডায়েটের অবদান ৭০ শতাংশ। তবে ডায়েট মানেই শুধু কম খাওয়ার নাম নয়, বরং কী খাচ্ছেন এবং কতটা খাচ্ছেন—সেই চর্চার নামই ডায়েট। আর এই চর্চা হওয়া উচিত শরীরের চাহিদা অনুযায়ী, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে।
বর্তমানে যে ডায়েটগুলো জনপ্রিয়—
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং: নির্দিষ্ট সময় খাওয়া ও না খাওয়ার মধ্য দিয়ে শরীরের চর্বি শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। তবে খাওয়ার সময়ও চাই নিয়ন্ত্রিত, পুষ্টিকর খাবার।
কিটো ডায়েট: চর্বির ওপর নির্ভরশীল এই ডায়েট দ্রুত ওজন কমালেও দীর্ঘমেয়াদে হতে পারে ফ্যাটি লিভার বা হার্ট সমস্যার ঝুঁকি।
মেডিটেরিয়ান ডায়েট: ফল, সবজি, মাছ, বাদাম ও অলিভ অয়েলে সমৃদ্ধ এই ডায়েট হৃদ্রোগ রোধে কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদে অনুসরণযোগ্য।
ভেগান ডায়েট: পরিবেশবান্ধব ও প্রাণিজ প্রোটিন বর্জিত হলেও এতে প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হতে পারে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়।
ওম্যাড ডায়েট: দিনে মাত্র একবার খাওয়ার নিয়ম শরীরে পুষ্টির ঘাটতি ডেকে আনতে পারে।
ড্যাশ ডায়েট: উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর এই পদ্ধতিতে সোডিয়াম কমিয়ে, ফল-সবজি বাড়ানো হয়।
প্রোটিন ডায়েট: খিদে কমাতে কার্যকর হলেও অতিরিক্ত প্রোটিন কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
প্যালিও ডায়েট: প্রাচীন খাবারভিত্তিক হলেও এতে নানা পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
তবে কোনটি আপনার জন্য?
সব ডায়েটই যে আপনার উপযোগী হবে, এমন নয়। বরং নিজের শারীরিক অবস্থা, রোগবালাই, ওজন এবং দৈনন্দিন জীবনযাপনের ধরন বুঝে তবেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো একজন অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া।
সুষম খাদ্যই শ্রেষ্ঠ
সবশেষে বলতেই হয়, যতো রকম ডায়েটই থাকুক, দিনের শেষে স্বাস্থ্য ধরে রাখতে হলে প্রয়োজন সুষম খাবার। এমন খাবার যা থেকে আপনি প্রয়োজনীয় ক্যালরি, পুষ্টি, এবং শক্তি পাবেন। অতিরিক্ত চিনি, প্রক্রিয়াজাত খাবার, কোমল পানীয়, ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন।