ঢাকা   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

ওষুধে শুল্ক আরোপে ফের কড়া বার্তা ট্রাম্পের

ওষুধে শুল্ক আরোপে ফের কড়া বার্তা ট্রাম্পের

আবারও ওষুধ আমদানিতে শুল্ক আরোপের কথা বললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্প। চলতি মাসের শেষ দিকে ওষুধ আমদানিতে শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। পাশাপাশি শিগগিরই সেমিকন্ডাক্টরের (চিপস) ওপরও শুল্ক বসানো হতে পারে।

আগামী ১ আগস্ট থেকে যে পাল্টা শুল্ক কার্যকর হতে যাচ্ছে, এসব নতুন শুল্ক তার সঙ্গেই কার্যকর হতে পারে। মঙ্গলবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক সম্মেলনে অংশ নিয়ে ফেরার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

ট্রাম্প আরও বলেন, শুরুতে ওষুধে স্বল্প হারে শুল্ক আরোপ করা হবে। এক বছর পর শুল্কহার অনেক বেড়ে যাবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে নিজস্ব উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য কোম্পানিগুলোকে সময় দেওয়া হবে। ব্লুমবার্গের সূত্রে ইকোনমিক টাইমস এ খবর দিয়েছে।

ট্রাম্প আরও জানান, সেমিকন্ডাক্টরের ক্ষেত্রে সময়সূচি প্রায় একই রকম, তবে এসব পণ্যের ওপর শুল্ক বসানো অপেক্ষাকৃত সহজ হবে। এর আগে এপ্রিল মাসে দেশটির ফেডারেল রেজিস্ট্রার দপ্তরের এক নোটিশে এই তথ্য জানিয়েছিল। এরপর মঙ্গলবার ট্রাম্প সে কথার পুনরাবৃত্তি করলেন।

এপ্রিলে ফেডারেল রেজিস্ট্রার দপ্তরের ঘোষণায় বলা হয়েছিল, জাতীয় নিরাপত্তার কারণে ওষুধ ও চিপে শুল্ক আরোপের কথা বলেছেন ট্রাম্প। কিন্তু বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ওষুধ কোম্পানিগুলো যাতে যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা চালু করে, সেই চেষ্টা চালাচ্ছেন ট্রাম্প। এ জন্য শুল্কের বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার পথে হাঁটছেন। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, আমাদের বাজার বড়। তাই শিগগির আমরা ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রীর ওপর বড় ধরনের শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেব। ’ মূলত ওষুধের ক্ষেত্রে বিদেশি নির্ভরতা কমাতে চান তিনি।

এ ছাড়া ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, তামার ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। ওষুধ আমদানির ওপর শুল্ক এক বছরের মধ্যে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, বিদেশি ওষুধের দাপটে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে। এ নিয়ে তিনি ১৯৬২ সালের ট্রেড এক্সপ্যানশন অ্যাক্টের ধারা ২৩২ অনুযায়ী তদন্তও শুরু করেছেন।

এ ধরনের শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওষুধ প্রস্তুতকারক, যেমন এলি লিলি, মার্ক ও ফাইজারের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে। কারণ, তারা অনেক ওষুধ বিদেশে উৎপাদন করে। এতে দেশটির সাধারণ ভোক্তাদের ওষুধের দাম বাড়তে পারে। একইভাবে সেমিকন্ডাক্টরের ওপর শুল্কের প্রভাব পড়বে অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের ল্যাপটপ ও স্মার্টফোনের ওপরও।

ট্রাম্প সম্প্রতি বেশ কিছু দেশকে চিঠি পাঠিয়ে একতরফাভাবে শুল্কের হার জানিয়ে দিয়েছেন। যদিও তিনি বলেছেন, দর-কষাকষি চলবে। মঙ্গলবার তিনি জানান, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। চুক্তিতে প্রস্তাবিত ৩২ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ১৯ শতাংশ করা হয়েছে। এর বিনিময়ে দেশটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের জ্বালানি ও ৪৫০ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য ও ৫০টি বোয়িং বিমান কিনবে।

ট্রাম্প আশা করছেন, ১ আগস্টের আগেই তিনি আরও ‘দুটি বা তিনটি’ বাণিজ্য চুক্তি করতে পারবেন। এসব চুক্তির মধ্যে ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ভারত ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশ আছে। তবে বলব, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব চিঠি দিয়ে আমি খুশি।’

ছোট দেশগুলোর জন্য ‘সাধারণ শুল্ক’ আরোপের পরিকল্পনার কথাও জানান প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, যেসব দেশ নিজস্ব হারে ছাড় পায়নি, সম্ভবত তাদের পণ্যে ১০ শতাংশের কিছু বেশি হারে শুল্ক আরোপিত হবে।

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা এই সপ্তাহেই মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসবেন। ইইউর জন্য ৩০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারিত রয়েছে। ট্রাম্প জানান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো কিছু দেশ ইতিমধ্যে বাণিজ্যের বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে, যদিও জাপান এখনো সাড়া দেয়নি।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে হুমকি দিয়ে দেওয়া ‘দ্বিতীয় স্তরের শুল্ক’ নিয়েও কথা বলেন ট্রাম্প। সম্প্রতি তিনি বলেছিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে না পারলে রাশিয়ার বাণিজ্যিক অংশীদারদেরও শুল্কের আওতায় আনা হবে। যদিও এতে আমেরিকানদের জ্বালানির খরচ বাড়তে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি না যে এর প্রভাব পড়বে।’

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের ওষুধে শুল্ক আরোপের নীতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উন্নয়নশীল দেশের ওষুধ কোম্পানিগুলোর উৎপাদন, রপ্তানি, প্রযুক্তি গ্রহণ ও কর্মসংস্থানে প্রভাব ফেলবে। শুধু জনস্বাস্থ্য নয়, অর্থনীতিতে এর দীর্ঘমেয়াদি ও গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে।

বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধ রপ্তানি করে। তবে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বে ভারত। ভারতের ওষুধের বৃহত্তম বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩–২৪ অর্থ বছরে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২ হাজার ৭৯০ কোটি ডলারের ওষুধ রপ্তানি করেছে।