ঢাকা   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

সাড়ে ১৬ হাজার আয়কর রিটার্নের অডিটে এনবিআরের কড়া নজর

সাড়ে ১৬ হাজার আয়কর রিটার্নের অডিটে এনবিআরের কড়া নজর

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২০২৩-২৪ করবর্ষে সারাদেশে ১৫ হাজার ৪৯৪টি আয়কর রিটার্ন অডিট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে, এই প্রক্রিয়ায় আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারের দাবি করা হলেও, এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, বিশেষ করে যখন এনবিআর নিজেই সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করছে।

বুধবার (১৬ জুলাই) এনবিআরের জনসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। এনবিআর দাবি করেছে যে, আয়কর রিটার্ন অডিটের জন্য রিটার্নগুলো ‘র‍্যান্ডম সিলেকশন’ বা দৈবচয়ন পদ্ধতিতে নির্বাচন করা হয়েছে, যা পক্ষপাতহীন ও পুরোপুরি কম্পিউটার-ভিত্তিক। কিন্তু এই 'স্বয়ংক্রিয়' পদ্ধতির কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে, কারণ এনবিআর নিজেই স্বীকার করেছে যে, এখনো সব পেপার রিটার্ন বা অফলাইনে জমা দেওয়া ফাইলের তথ্য ডিজিটাল ডেটাবেজে যুক্ত করা সম্ভব হয়নি। এই মৌলিক সীমাবদ্ধতার কারণে আপাতত বিকল্প পদ্ধতিতে অডিট নির্বাচন করা হয়েছে, যা প্রকৃত স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।


অডিট নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এনবিআর ‘ঝুঁকি-ভিত্তিক নিরীক্ষা নির্বাচনের মানদণ্ড’ (Risk-Based Audit Selection Criteria) চালুর উদ্যোগ নিলেও, এটি এখনো একটি পূর্ণাঙ্গ অটোমেটেড সিস্টেম নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত সব তথ্য ডিজিটাল না হচ্ছে, ততক্ষণ এই পদ্ধতির কার্যকারিতা সীমিতই থাকবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রতিটি কর অঞ্চল বা সার্কেল থেকে শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ (০.৫%) রিটার্ন দৈবচয়নের ভিত্তিতে বাছাই করা হয়েছে। যদিও এটি বিভিন্ন শ্রেণির করদাতাদের অডিটের আওতায় আনার সুযোগ দিচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে, কিন্তু এই সীমিত শতাংশের বাছাই কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

এনবিআর একটি বিশেষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে—গত দুই করবর্ষে যেসব করদাতা অডিটের আওতায় ছিলেন, এবার তাদের অডিট তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে একদিকে যেমন পুনরাবৃত্তি এড়ানো গেছে, তেমনি করদাতাদের আস্থা বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। তবে, এটি প্রকৃত খেলাপিদের আড়াল করার সুযোগ তৈরি করতে পারে কিনা, সেই প্রশ্নও উঠছে।


এনবিআর নিজেই জানিয়েছে, র‍্যান্ডম সিলেকশন পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা থাকলেও, কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায়ের নিশ্চয়তা তাতে মেলে না। তাই ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা আরও এগিয়ে নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। শিগগিরই সব পেপার রিটার্নের তথ্য ডিজিটাল ডেটাবেজে সংযুক্ত করে, পূর্ণাঙ্গ ‘রিস্ক-বেইসড’ অডিট নির্বাচন প্রক্রিয়া চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।

তবে এই 'পুরো ব্যবস্থা চালু হলে অডিট বাছাই আরও স্বচ্ছ, কার্যকর ও লক্ষ্যভিত্তিক হবে এবং রাজস্ব আদায়ে কাঙ্ক্ষিত গতি ও সঠিকতা আসবে'—এই প্রতিশ্রুতি কবে নাগাদ বাস্তবায়িত হবে এবং তার আগে পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ে যে ঘাটতি থাকবে, তার সমাধান কী, তা নিয়ে এনবিআর স্পষ্ট কোনো ধারণা দেয়নি। এটি কেবলই ভবিষ্যতের আশার বাণী, বর্তমানের সীমাবদ্ধতাকে আড়াল করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।