ঢাকা   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

নামাজকে মনোযোগী করার ৪ সহজ উপায়

নামাজকে মনোযোগী করার ৪ সহজ উপায়

নামাজ শুধু ধর্মীয় আচার নয়, বরং আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের একটি মাধ্যম। অথচ আমরা অনেক সময় নামাজ আদায় করি তাড়াহুড়া করে, অমনোযোগিতার সঙ্গে বা বলা যায়, যান্ত্রিকভাবে। ফলে নামাজের প্রকৃত উদ্দেশ্য অধরা থেকে যায়, আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং আত্মিক শান্তি হাসিল আর হয় না।

তবে নামাজের মান উন্নত করার জন্য কিছু সহজ কিন্তু শক্তিশালী উপায় রয়েছে, যা আমাদের নামাজকে আরও অর্থপূর্ণ ও মনোযোগী করে তুলতে পারে। নিচে চারটি এমন উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো—

১. এমনভাবে পড়ুন, যেন এটি আপনার শেষ নামাজ
নামাজ এমনভাবে পড়া উচিত, যেন এটি তোমার শেষ নামাজ। কেননা, জানা নাই, এরপরই আমি বাঁচব নাকি বাঁচব না। হতে পারে জীবনের সব পাপ আল্লাহ এই এক নামাজের অছিলায় ক্ষমা করে দেবেন।
এমন চিন্তা মনে স্থান দিতে পারলে প্রতিটি রুকু, সিজদা ও তাসবিহ পড়ার সময় সচেতনভাবে আল্লাহর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করব। যেন এটাই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার শেষ সুযোগ।

হাদিসে এসেছে, ‘যখন তুমি নামাজে দাঁড়াও, তখন এমনভাবে নামাজ পড়, যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ। আর যদি তুমি তাঁকে দেখতে না পাও, তবে তিনি তোমাকে দেখছেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৬৮)

২. শরীরকে পুরো বিশ্রাম দিন
নামাজের প্রতিটি অবস্থান—দাঁড়ানো, রুকু, সিজদা, বসা একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বহন করে। কিন্তু তাড়াহুড়ার কারণে আমরা প্রায়ই এই অবস্থানগুলোতে পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারি না। নামাজের মান উন্নত করার একটি কার্যকর উপায় হলো প্রতিটি অবস্থানে শরীরকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে আনা।

যেমন, আপনি যখন রুকুতে যাবেন, তখন আপনার শরীরের হাড় ও পেশি স্থির হতে দিন। এই সময়ে ধীরে ধীরে ‘সুবহানা রব্বিয়াল আজিম’ বলুন। একইভাবে, সিজদায় গিয়ে শরীরকে শান্ত ও স্থির রাখুন এবং ‘সুবহানা রব্বিয়াল আলা’ ধীরে ধীরে উচ্চারণ করুন।

তাহলে নামাজে তাড়াহুড়া কমে আসবে এবং প্রতিটি রোকন আদায়ে ও প্রার্থনায় মনোযোগ বাড়বে। ড. আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ আল-মুতলাক বলেন, ‘নামাজে প্রতিটি অঙ্গের স্থিরতা এবং মনের একাগ্রতা একে অপরের পরিপূরক।’ (বিউটি অব সালাত, ২০১৮, পৃষ্ঠা: ৪৫, দারুস সালাম প্রকাশনী)


৩. শয়তানের প্রভাব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা
নামাজের সময় শয়তান আমাদের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। হঠাৎ কোনো অপ্রাসঙ্গিক চিন্তা, দৈনন্দিন কাজের চাপ বা অন্যান্য বিষয় মনে আসতে পারে।

এসব থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি কার্যকর উপায় হলো নামাজ শুরু করার আগে বা প্রয়োজনে নামাজের মাঝখানে ‘আউজু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম’ (আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি অভিশপ্ত শয়তান থেকে) বলা। আল্লাহর ইচ্ছায়, এই দোয়া আমাদের মনকে শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত করে এবং আল্লাহর দিকে মনোযোগ ফিরিয়ে আনবে।কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যখন তুমি কোরআন পড়তে শুরু কর, তখন অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ৯৮)

এই নির্দেশনা নামাজের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, কারণ, নামাজে কোরআন পড়া হয় এবং এটি একটি ইবাদত। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘শয়তান মানুষের মনে ফিসফিস করে, কিন্তু আল্লাহর স্মরণ তাকে দূর করে দেয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩,২৮৯)

তাই নামাজে মনোযোগ ছুটে গেলে আউযুবিল্লাহ পড়ার অভ্যাস করুন।

৪. ‘আল্লাহু আকবর’–এর অর্থ হৃদয়ে ধারণ করুন
নামাজে আমরা বারবার ‘আল্লাহু আকবর’ বলি, কিন্তু এই শব্দগুলোর গভীর অর্থ নিয়ে আমরা কতটুকু ভাবি? ‘আল্লাহু আকবর’ মানে আল্লাহ সবকিছুর চেয়ে মহান। এর মানে হলো, আমরা নামাজের আগে যা করছিলাম, নামাজের পরে যা করব, বা যে কারণে তাড়াহুড়া করছি, তার সবকিছুর চেয়ে আল্লাহ বড়।

প্রতিবার ‘আল্লাহু আকবর’ বলার সময় এটি মনে করুন যে আল্লাহর চেয়ে বড় কিছু নেই। ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, ‘আল্লাহু আকবর বলার মাধ্যমে মুমিন তার হৃদয়কে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে দেয় এবং সবকিছুর ওপর আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে।’ (মাজমুয়ায়ে ফাতাওয়া, ১৯৯৫, পৃষ্ঠা: ২২০, দারুল ওয়াফা প্রকাশনী)

মোট কথা, নামাজ আমাদের জীবনের একটি অমূল্য উপহার, যা আমাদের আল্লাহর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ দেয়। ওপরে যে চারটি উপায় বলা হলো, সেগুলো সহজ হলেও এর প্রভাব গভীর। আসুন, চেষ্টা করে দেখি।

সূত্র: অ্যাবাউট ইসলাম ডটনেট