ঢাকা   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে শাহবাগ অবরোধ

গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে শাহবাগ অবরোধ

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রা কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। আজ বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে এনসিপির নেতা-কর্মীরা শাহবাগ মোড়ে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এতে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক পর নেতা-কর্মীরা সড়ক ছেড়ে যান।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেদ মনসুর গণমাধ্যম কে  বলেন, বিকেল পাঁচটার পর এনসিপির কিছু নেতা-কর্মী শাহবাগ আসেন। তাঁরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রশিদুল ইসলাম ওরফে রিফাত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে লেখেন, ‘গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ব্লকেড কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সকল ইউনিটকে স্থানীয় ছাত্রসংগঠন, রাজনৈতিক দলসহ সর্বস্তরের ছাত্র-জনতাকে সাথে নিয়ে ব্লকেড কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো যাচ্ছে।’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার প্রতিবাদে ‘ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকেল থেকে শাহবাগে জড়ো হতে থাকেন এনসিপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতা-কর্মীরা। পরে তাঁরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করলে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

‘ব্লকেড’ কর্মসূচিতে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আবদুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী দোসররা আবার ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছে। এই সরকার গণ-অভ্যুত্থানের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ছাত্র-জনতা আবারও মার খাচ্ছে। আওয়ামী দোসররা ইনিয়েবিনিয়ে এই হামলাকে জায়েজ করছে।’

আবদুল কাদের বলেন, ‘যারা লীগকে জায়েজ করতে চায়, তাদের ঠিকানা এ দেশে হবে না। আমরা দেখেছি, পুলিশ নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে। কার ইন্ধনে প্রকাশ্যে খুনিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে? জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষার ছিটেফোঁটাও এই সরকার বাস্তবায়ন করতে পারেনি।’

এ সময় গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে আবার ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে।

শাহবাগের পাশাপাশি রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড়, শনির আখড়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, মিরপুর-১০, উত্তরার ৮ নম্বর সেক্টরের আজমপুর ও হাউজ বিল্ডিং মোড় আটকে বিক্ষোভ করেন এনসিপির নেতা-কর্মীরা। এ সময় নেতা-কর্মীরা ‘হইহই রইরই, আওয়ামী লীগ গেলি কই; গোপালগঞ্জে হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

পরে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ‘ব্লকেড’ সরিয়ে রাস্তার একপাশে অবস্থান নিতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে শাহবাগ ছেড়ে যান অবরোধকারীরা।

মাসব্যাপী জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বুধবার গোপালগঞ্জে সমাবেশ করতে গেলে বেলা পৌনে দুইটার দিকে ২০০ থেকে ৩০০ লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে এনসিপির সমাবেশস্থলে হামলা চালান। হামলাকারীরা সবাই কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে এনসিপির নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেছেন।

এনসিপির সমাবেশ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একদল ব্যক্তি লাঠিসোঁটা নিয়ে নেতা-কর্মীদের ঘিরে আবার হামলা চালান। এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। দফায় দফায় হামলা-সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন বলে হাসপাতাল ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে।


এর আগে সকালে পুলিশের গাড়িতে হামলা ও আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। খবর পেয়ে ওই এলাকা পরিদর্শনে গেলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম রাকিবুল হাসানের গাড়িতেও হামলা করা হয়। এতে ইউএনও রাকিবুল হাসানের গাড়ির চালক আহত হন।