ঢাকা   রোববার ০৮ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চামড়ায় সরকার নির্ধারিত দাম মিলছে না, লোকসানে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

অর্থ ও বাণিজ্য

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৩:৩০, ৮ জুন ২০২৫

আপডেট: ১৩:৩৫, ৮ জুন ২০২৫

চামড়ায় সরকার নির্ধারিত দাম মিলছে না, লোকসানে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

কোরবানির ঈদে পশু কোরবানির পর চামড়ার বাজারে আবারও হতাশা নেমে এসেছে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের মধ্যে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গরুর কাঁচা চামড়া ৭০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হলেও সরকার নির্ধারিত দরের ধারেকাছেও যাচ্ছে না এই বেচাকেনা। ঢাকার বাইরের এলাকায় পরিস্থিতি আরও খারাপ—সেখানে গড়ে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যেই চামড়া বিক্রি হচ্ছে।

চলতি বছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৬০-৬৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৫৫-৬০ টাকা নির্ধারণ করলেও বাজারে সেই দামে বিক্রি হচ্ছে না। বড় আকারের একটি গরুর চামড়ার দাম হওয়ার কথা প্রায় ১৫০০ টাকা, অথচ পোস্তা, সায়েন্স ল্যাব ও হাজারীবাগে সেই চামড়া বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকায়। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বলছেন, চামড়া কিনে পরিবহন, লবণ ও শ্রমিকের খরচ দিয়ে লাভ তো দূরের কথা, মূলধনই তুলতে পারছেন না তাঁরা।

ট্যানারি মালিকেরা অবশ্য দাবি করছেন, গত বছরের তুলনায় এবার প্রতি পিস চামড়ায় ৩০-৫০ টাকা বেশি দিচ্ছেন। তবে বিকেলের পর চাহিদা কমে যাওয়ায় দাম পড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। আড়তদারেরা অনেক সময় ছোট আকারের চামড়া নিতেই চান না, আবার চামড়ার গুণগত মান ও আয়তনের ভিত্তিতে ২০-৩০ শতাংশ বাদ দিয়ে দামে কষাকষি করেন।

চট্টগ্রামেও একই চিত্র। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা গড়ে ৪০০-৫০০ টাকায় চামড়া কিনলেও বিক্রি করতে হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকায়। এতে তাদের বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। চামড়াশিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য গড়ে ৩৫০-৪০০ টাকা খরচ হয়, ফলে বাজারে মূল্যস্ফীতি ও কম চাহিদার কারণে দাম কমে যাচ্ছে।

তবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি খাতে কিছুটা ইতিবাচক প্রবণতা রয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি হয়েছে ১০৬ কোটি ডলারের, যা আগের বছরের তুলনায় সাড়ে ১২ শতাংশ বেশি। এর পরও স্থানীয় বাজারে দাম বাড়ছে না।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মূল কারণ হেমায়েতপুরের চামড়াশিল্প নগরের পরিবেশগত অনিয়ম ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে না পারা। ইউরোপ-আমেরিকার ক্রেতারা বাংলাদেশের চামড়া এড়িয়ে চলায় মূলত চীনই একমাত্র বড় ক্রেতা, যারা কম দামে চামড়া নেয়। ফলে বাজারে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

র‌্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক মো. আবু ইউসুফের মতে, কোরবানির ঈদে বিপুল চামড়া সরবরাহ হয়, কিন্তু পরিকল্পিত সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণ না থাকায় অনেক চামড়ার দাম পড়ে যায়। যদি হেমায়েতপুর চামড়াশিল্প নগরকে পরিবেশবান্ধব ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তোলা যায়, তবে বছরে ১০-১২ বিলিয়ন ডলারের চামড়া রপ্তানি সম্ভব, যা দেশে কোরবানির চামড়ার বাজারকেও চাঙ্গা করতে পারে।

চামড়ার সঠিক মূল্য নিশ্চিত করতে হলে সরকারের নির্ধারিত দাম কার্যকর করা, চামড়াশিল্পে পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো নিশ্চিত করা এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীদের জন্য নির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করা জরুরি। না হলে প্রতি বছর কোরবানির পর চামড়া নিয়ে একই হতাশা বারবার ফিরে আসবে।