
‘তাণ্ডব’ সিনেমা শুরুর আগেই কৌতূহলের কেন্দ্রে ছিল রায়হান রাফী ও শাকিব খানের এই জুটি। ‘তুফান’–এর পর তাদের দ্বিতীয় জুটি কেমন হলো, সেটিই দেখার ছিল। মুক্তির পর দর্শকেরা দেখলেন, শাকিব-রাফী শুধু পুরোনো ছক ভাঙেননি, শেষ ৩০ মিনিটে এমন চমক দিয়েছেন, যা ঢালিউডে বিরল।
সিনেমার শুরু এক আবহাওয়ার খবরে, যেখানে কোনো বিপৎসংকেত নেই। অথচ কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় ‘মাঙ্কি মাস্ক’ পরা সন্ত্রাসী দলের অভিযান। তাদের তাণ্ডব ঠেকাতে আসে সোয়াট বাহিনী। কিন্তু এই সংঘাতের মধ্যেই আবিষ্কৃত হয় অন্য এক গল্প। বেকারত্ব, গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা—সবই উঠে এসেছে শক্তভাবে। শাকিব খানের চরিত্র ‘স্বাধীন’ যেন প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশের বাস্তব সংকটের।
শুরুতে কিছুটা ধীরগতির হলেও সিনেমার মাঝপথে নিজেই শাকিব বলেন, “এখন গল্পের ক্লাইম্যাক্স দরকার।” এরপরই একের পর এক টুইস্ট দর্শকদের চমকে দেয়। শাকিবের অভিনয়ে বৈচিত্র্য ছিল চোখে পড়ার মতো—প্রেমিক, বিপ্লবী, সহজ যুবক থেকে হঠাৎ ভয়ংকর হয়ে ওঠা চরিত্রে সাবলীল তিনি। মারামারির দৃশ্যে ‘দ্য ওল্ডবয়’-এর ছায়া থাকলেও তা রীতিমতো জমে গেছে।
সবচেয়ে বড় চমক আসে শেষে—সিয়াম আহমেদ ও আফরান নিশোর উপস্থিতি। অতিথি চরিত্র হলেও সিয়ামের সংলাপ, উপস্থিতি ও অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করে। নিশো ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমার সূত্র টেনে এনে ভবিষ্যতের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেন। সাবিলা নূরও নাটক থেকে সিনেমায় পা রেখে আত্মবিশ্বাসী অভিনয় করেন শাকিবের বিপরীতে।
গানের সময় ও স্থানে কিছু অসামঞ্জস্য, টক শোয়ের দৃশ্যে বাস্তবতাবিরোধী কিছু উপস্থাপন থাকলেও, সামগ্রিকভাবে রায়হান রাফী নিজেকে আবারও প্রমাণ করেছেন। গল্প লিখেছেন নিজে, চিত্রনাট্যে ছিলেন আদনান আদিব খান। ক্যামেরায় তাহসিন রহমানের কাজ প্রশংসনীয়।
সব মিলিয়ে ‘তাণ্ডব’ শুধু একটি থ্রিলার নয়, এটি একটি সামাজিক বার্তাবাহী রাজনৈতিক সিনেমা, যেটি বাণিজ্যিকতার ছাঁদে দর্শকদের নাড়িয়ে দেয়। শেষ দৃশ্যে ‘তাণ্ডব–২’–এর ইঙ্গিত যেন এই জুটির আরেক বিস্ফোরণের অপেক্ষায় রাখে ঢালিউডকে।