
বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তনের নাম যমুনা ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড অটোমোবাইলস লিমিটেড। রাজধানীর কাছেই গাজীপুরের সফিপুরে শত শত একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা বিশাল কারখানায় চোখ ধাঁধানো প্রযুক্তির ছোঁয়ায় প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের ফ্রিজ, টিভি, এসি ও মোটরসাইকেলসহ নানা পণ্য। এখানে রয়েছে রোবোটিক উৎপাদন লাইন, আধুনিক যন্ত্রপাতি, ইউরোপীয় মানের কোয়ালিটি কন্ট্রোল সিস্টেম এবং দিনরাত কাজ করছেন দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার দক্ষ কর্মী। নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় দেশের ৪৯০টি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকাতেও পৌঁছে যাচ্ছে যমুনার পণ্য।
বিশাল এ কারখানার প্রতিটি ইউনিটেই যেন চলছে টেকসই উন্নয়নের এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। মার্কেটিং ডিরেক্টর সেলিম উল্যা সেলিম জানালেন, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষই যমুনাকে এগিয়ে নিচ্ছে। স্মার্ট কন্ট্রোলিং সিস্টেম, এআই প্রযুক্তি, ইনভার্টার ও বিদ্যুৎ-সাশ্রয়ী কুলিং প্রযুক্তি—সব মিলিয়ে প্রতিটি রেফ্রিজারেটরই যেন একটি উদ্ভাবনের নাম। বাংলাদেশে গ্লাসডোর ফ্রিজের প্রথম প্রবর্তক যমুনাই। এখন বাজারে এসেছে স্মার্ট ওয়াই-ফাই কন্ট্রোল, ডিজিটাল টাচ ডিসপ্লে, মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে টেম্পারেচার নিয়ন্ত্রণযোগ্য রেফ্রিজারেটরও।
কারখানায় থাকা গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) ল্যাবে নতুন প্রযুক্তি, ডিজাইন ও কার্যকারিতা উন্নয়নে চলছে নিরন্তর গবেষণা। চীনা প্রকৌশলী সিন হুয়ান বলেন, “আমাদের ব্যবহৃত প্রযুক্তি প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে।” এতে শহর ও গ্রাম—দুই শ্রেণির গ্রাহকরাই উপকৃত হচ্ছেন। ফাস্টার কুলিং প্রযুক্তি খাবারকে দ্রুত ঠান্ডা করে দীর্ঘক্ষণ সতেজ রাখে। পরিবেশবান্ধব R-600a গ্যাস ব্যবহারের ফলে ওজোনস্তরেও ক্ষতি হয় না।
যমুনার ফ্রিজে রয়েছে বিল্ট-ইন স্ট্যাবিলাইজার, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গ্যাসকেট, টেম্পার্ড গ্লাস শেলফসহ নানা কার্যকর বৈশিষ্ট্য। ছোট, মাঝারি ও বড় বিভিন্ন মাপের রেফ্রিজারেটরের ডিজাইন ও ফিচার নির্ধারণ করা হয় স্থানীয় আবহাওয়া, বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ও গ্রাহকের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় রেখে। এর ফলে গ্রামীণ বাজারেও সহজেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যমুনা পণ্য।
সব মিলিয়ে যমুনা ইলেকট্রনিকস শুধু একটি কোম্পানিই নয়, বরং দেশের প্রযুক্তি, কর্মসংস্থান ও শিল্পায়নের এক শক্তিশালী চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। উন্নত উৎপাদন, গবেষণা, পরিবেশবান্ধব নীতি এবং গ্রাহককেন্দ্রিক উদ্ভাবনের মাধ্যমে তারা এগিয়ে চলেছে একটি আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে।