
সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান পরিচালক আলমগীর কবির, সাবেক এমডি এম কামাল হোসেন, সিনিয়র কর্মকর্তা জেসমিন সুলতানাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। অভিযোগে বলা হয়েছে, এক অখ্যাত কোম্পানির শেয়ার কেনার মাধ্যমে ব্যাংকের সাড়ে সাত কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
কী নিয়ে অভিযোগ?
ব্যাংকের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, অভিযুক্তরা পরস্পরের যোগসাজশে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়াই ‘ই এম পাওয়ার লিমিটেড’ নামের একটি অখ্যাত কোম্পানির শেয়ার কেনেন। চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ হারে লভ্যাংশ পাওয়ার কথা থাকলেও কোনো লভ্যাংশ পাওয়া যায়নি। বরং, সাড়ে সাত কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে দাবি ব্যাংকের।
কারা অভিযুক্ত?
এই অভিযোগে যাদের নাম রয়েছে—
-
আলমগীর কবির (সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান পরিচালক)
-
এম কামাল হোসেন (সাবেক এমডি)
-
জেসমিন সুলতানা (এসএভিপি)
-
ওয়াহেদ আলী (ই এম পাওয়ারের প্রতিনিধি)
-
প্রতিষ্ঠান ই এম পাওয়ার লিমিটেড
অভিযোগের ভিত্তি কী?
৬ মে সাউথইস্ট ব্যাংকের সিনিয়র নির্বাহী খোরশেদ আলম চৌধুরীর সই করা অভিযোগপত্রে বলা হয়, অভিযুক্তরা ইচ্ছাকৃতভাবে কোম্পানি আইন ও শেয়ারবাজারের বিধি লঙ্ঘন করেছেন। চুক্তি করার আগে যথাযথ নিরীক্ষা, মূল্যায়ন বা নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন নেয়া হয়নি।
ভেতরের অনিয়মও ফাঁস
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে এসব অনিয়ম প্রথম ধরা পড়ে। এরপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ নেয় এবং দুদকে চিঠি পাঠায়। অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় আরও উঠে আসে, ব্যাংকের কেনাকাটা, প্রচার, সংস্কার, নিয়োগ ও ঋণ খাতে অসংখ্য অনিয়ম হয়েছে। এসব অনিয়মে জড়িত তিন কর্মকর্তা— ওয়ারেস উল মতিন, মো. তানভীর রহমান ও এ কে এম নাজমুল হায়দার— ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন।
আলমগীর কবিরের ২০ বছরের দাপট
আলমগীর কবির ২০০৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত টানা দুই দশক সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে থেকেই ব্যাংকে একের পর এক অনিয়ম ঘটে বলে অভিযোগ উঠেছে। সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন ও বড় অঙ্কের জরিমানার পরও তিনি দীর্ঘদিন পদে বহাল ছিলেন।
রাজনৈতিক যোগসূত্র
ব্যাংকটির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ঋণখেলাপির তথ্য গোপন করে তিনজন আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে নির্বাচনে অংশ নিতে সুযোগ করে দেয়। এদের মধ্যে রয়েছেন সাবের হোসেন চৌধুরী, মোরশেদ আলম ও মামুনুর রশিদ কিরণ। এ ছাড়া বেঙ্গল ব্যাংকের পরিচালক আবু নোমান হাওলাদারের ঋণ খেলাপিও গোপন রাখা হয়।
নতুন নেতৃত্বে পরিবর্তন
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। দীর্ঘ ২০ বছর পর আবারও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এম এ কাশেম। এরপর থেকেই দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।