ঢাকা   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

টেকসই উন্নয়নে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের ছয় খাতে আলো ছড়ানো উদ্যোগ

কর্পোরেট

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৪৯, ৭ মে ২০২৫

টেকসই উন্নয়নে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের ছয় খাতে আলো ছড়ানো উদ্যোগ

বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন ও সামাজিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, উদ্যোক্তা তৈরি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা—এই ছয়টি খাতে ব্যাংকটির বিভিন্ন প্রকল্প ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাস্তব ও ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে। হাওর অঞ্চলের কৃষকের আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি উন্নত হয়েছে খাদ্যাভ্যাস ও কৃষি উৎপাদনশীলতা। স্বাস্থ্যসেবায় পৌঁছানো গেছে দুর্গম অঞ্চলেও।

ব্যাংকের ভাষ্য:
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের সিইও নাসের এজাজ বিজয় বলেন, “এই উদ্যোগগুলো শুধুমাত্র আমাদের ব্যবসার বাইরের অংশ নয়, বরং আমাদের পরিচয়েরই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমরা উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়ন, শিক্ষার্থীদের বিকাশ, পরিবেশ রক্ষা, কৃষির শক্তিশালীকরণ, উদ্ভাবনে সহায়তা এবং দুর্যোগকালে সহমর্মিতা—এসব খাতে বিনিয়োগ করছি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব তৈরির লক্ষ্যে।”


প্রকল্পগুলোর খাতভিত্তিক বিবরণ:

কৃষি খাত:

দেশের ২৩ জেলায় বাস্তবায়ন হচ্ছে ১১টি কৃষি প্রকল্প। এর মধ্যে রয়েছে—

  • ফসল উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি,

  • মাছ ও মৌচাষ,

  • কৃষিযন্ত্র ব্যবহারের বিস্তার এবং

  • কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াকরণ।
    এছাড়া চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাতটি গবেষণা প্রকল্পে অর্থায়ন করা হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য প্রভাব:
হাওর অঞ্চলের (সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ) কৃষকদের আয় ১৫.৫৭% বেড়ে হয়েছে বছরে প্রায় ৯৮,২৩৮ টাকা। ফসল উৎপাদন বেড়েছে ৩২.১১% এবং ধান কাটায় সময় কমেছে ৭৯.৫৪%। খরচ কমেছে ৫৫%–৭৫% পর্যন্ত।


স্বাস্থ্য খাত:

  • চক্ষুচিকিৎসা ক্যাম্পে সেবা পেয়েছেন ১১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ।

  • ভাসমান হাসপাতালের মাধ্যমে চিকিৎসা পেয়েছেন ৫০ হাজার গ্রামীণ মানুষ।

  • প্রশিক্ষণ পেয়েছেন ১১৮ জন নার্স।

  • চারটি কমিউনিটি হাসপাতালে স্থাপন করা হয়েছে মেডিকেল অক্সিজেন কেন্দ্র।


শিক্ষা ও উদ্যোক্তা তৈরি:

  • ইউসেপের মাধ্যমে ৭ হাজার তরুণ-তরুণী পেয়েছেন দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সহায়তা।

  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ-তে নির্মিত হয়েছে সম্মেলনকেন্দ্র ও শিক্ষক লাউঞ্জ।

  • জাগো ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ৫ হাজার শিক্ষার্থী পেয়েছে শিক্ষাসামগ্রী।

  • স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ পেয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার তরুণ।


পরিবেশ খাত:

  • খুলনা মুক্তি সেবা সংস্থা ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সহায়তায় কাজ হচ্ছে ফুল চাষ উন্নয়ন ও প্লাস্টিক দূষণ হ্রাসে।

  • ৫০ হেক্টর জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে ম্যানগ্রোভ বন, যা জীববৈচিত্র্য ও জলবায়ু সহনশীলতা বাড়াবে।


দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা:

  • উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এক লাখের বেশি মানুষ পেয়েছে জরুরি সহায়তা।

  • উত্তরের জেলাগুলোতে ১০ হাজার মানুষকে দেওয়া হয়েছে শীতবস্ত্র।

  • চরাঞ্চলে বন্যার সময় আশ্রয়ের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে আটটি ‘প্লিন্থ’ (উঁচু প্ল্যাটফর্ম)।


নির্ভরযোগ্যতা ও মূল্যায়ন:

প্রতিটি প্রকল্প তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করা হয় যেন প্রকল্পের বাস্তব প্রভাব ও টেকসইতা নিশ্চিত হয়।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং প্রধান বিটপী দাস চৌধুরী বলেন, “মাঠপর্যায়ের সহযোগী সংস্থাগুলোর অবদান ছাড়া এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা যেত না। তাদের দক্ষতা ও সম্পৃক্ততাই প্রকল্পগুলোকে সফল করছে।”


নির্বাচিত প্রকল্পগুলোর বাস্তব প্রভাব:

  1. হাওরের কৃষকদের বার্ষিক আয়:

    • আগে: ৮৫,০০২ টাকা

    • এখন: ৯৮,২৩৮ টাকা (বৃদ্ধি: ১৫.৫৭%)

  2. জলবায়ু–ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় প্লিন্থ ব্যবহার:

    • শতভাগ পরিবার প্লিন্থ ব্যবহার করেছে।

    • মানসিক চাপ কমেছে ৪৯%

    • গড় আয় বেড়ে ১৭,২৬২ টাকা হয়েছে (আগে ছিল ৭,৫১৯ টাকা)

  3. মধু উৎপাদন প্রকল্প:

    • উৎপাদন বেড়েছে ২৫.৮৯%

    • বিক্রি বেড়েছে ১৩.১০%

    • মূল্য বেড়েছে ৭.৮৫%

    • ৭০% চাষি জানিয়েছেন মৌসুমী ফসলের ফলন বেড়েছে (লিচু, আম, সরিষা, ধনে)


স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের এই উদ্যোগগুলো কেবল তাৎক্ষণিক সহায়তা নয়, বরং দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির পথনির্দেশ করছে। ‘হেয়ার ফর গুড’ স্লোগান বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই ব্যাংক ১২০ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে উন্নয়নের অংশীদার হয়ে কাজ করে যাচ্ছে।