ঢাকা   সোমবার ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

পর্দার ‘মা’ আজ বড় একা—অভিনয় থেকে জীবনের কান্নায় রেহানা জলি

বিনোদন

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৮:০৭, ১১ মে ২০২৫

সর্বশেষ

পর্দার ‘মা’ আজ বড় একা—অভিনয় থেকে জীবনের কান্নায় রেহানা জলি

পর্দায় শত শতবার মা হয়েছেন, সন্তানকে বুকে আগলে কাঁদিয়েছেন দর্শকদের। অথচ সেই রেহানা জলি এখন নিজের জীবনেই হারিয়ে গেছেন একাকিত্বের অন্ধকারে। ক্যামেরার সামনে নয়, এখন তিনি কাঁদেন ঘরের চার দেয়ালে। পর্দার যে মা ছিলেন সকলের প্রিয়, সেই রেহানা জলি আজ অবহেলিত, অভিভাবকহীন একজন মানুষ।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে ১৯৮৫ সালে ‘মা ও ছেলে’ ছবির মাধ্যমে শুরু করেছিলেন রুপালি পর্দায় যাত্রা। বুলবুল আহমেদের স্ত্রীর এবং আলমগীরের মায়ের ভূমিকায় প্রথম সিনেমাতেই নজর কাড়েন। এরপর আর থেমে থাকেননি। চার দশকের ক্যারিয়ারে অভিনয় করেছেন প্রায় ৪০০ ছবিতে। কখনো মা, কখনো নায়িকা হয়ে জয় করেছেন দর্শকের মন। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও।

কিন্তু চার বছর ধরে তিনি অভিনয়ের বাইরে। সাত বছর আগে ফুসফুসের ক্যানসার ধরা পড়ে, এখন স্নায়ুজনিত জটিলতায় ভুগছেন। ঢাকার ইস্কাটনের গাউসনগরে মেজ বোন লাইজুর বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন তিনি। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস—এই বোনেরও দুটি কিডনি বিকল। রেহানা জলির ভাষায়, ‘ভাগ্যের কী লীলাখেলা! এক সময় সংসার চালাতাম, এখন বসলে উঠতেই পারি না।’

চলচ্চিত্রে অমূল্য সময় দিলেও আজ শিল্পী সমাজ থেকে তিনি প্রায় বিচ্ছিন্ন। রেহানা জলি জানালেন, গত চার বছরে কেউ তাঁর খোঁজ নেয়নি, শুধুমাত্র শিল্পী সমিতির ভোটের সময় কয়েকজন যোগাযোগ করেছিল। আর এটাই তাঁর সবচেয়ে বড় কষ্ট। বললেন, ‘সকাল-রাত শুটিং করেছি, অথচ আজ কেউ জিজ্ঞেস করে না—কেমন আছেন?’

নিজের উপার্জন দিয়ে ছোটবেলা থেকেই গড়েছেন ভাই-বোনদের ভবিষ্যৎ। বাবা হারিয়েছেন ছোটবেলায়, মা নেই আট বছর ধরে, একমাত্র ভাইও মারা গেছেন ২৫ বছর বয়সে। এখন বেঁচে আছেন পাঁচ বোন, রেহানা জলি তাঁদের বড়। পরিবার গড়ার কথা ভাবেননি, সংসারের চিন্তায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন অভিনয়ে।

অবস্থার বর্ণনায় বলেন, ‘আমি চাই আবার অভিনয়ে ফিরতে। ভারতের অনেক শিল্পী রোগ নিয়েও কাজ করেন। আমার আগে দরকার সঠিক চিকিৎসা।’ ক্যানসারের চিকিৎসায় একসময় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পেয়েছিলেন ২৫ লাখ টাকা, যা দিয়ে চালিয়েছেন ব্যয়বহুল চিকিৎসা। কিন্তু এখন তিনি অর্থাভাবে, একাকিত্বে, এবং উপেক্ষায় জীবন কাটাচ্ছেন।

শেষবার ২০২০ সালে ‘ইস্টিশন’ ও ‘মন পিঞ্জর’ নামে দুটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। তারপর আর ফিরতে পারেননি। বললেন, ‘চার শ ছবিতে অভিনয় করলাম, তবু আজ মনে হয় সবই ছিল অভিনয়। এই জগতে কেউ কারও নয়।’

পর্দার ‘মা’ হয়ে যিনি কাঁদিয়েছেন কোটি দর্শককে, সেই রেহানা জলি এখন কাঁদেন নিঃশব্দে, অভিভাবকহীন এক জীবনের ভার বুকে নিয়ে।

 

সর্বশেষ