
আন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্তের পর এবার নজর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দিকে। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, সরকারি গেজেট বা আনুষ্ঠানিক কাগজপত্র না পাওয়া পর্যন্ত ইসি কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। তিনি বলেন, ‘পত্রিকা বা টেলিভিশন রিপোর্ট দেখে নয়, বরং সরকারিভাবে লিখিত সিদ্ধান্ত পাওয়ার পরই আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’ আজ (সোমবার) এই বিষয়ে একটি বৈঠক হবে বলেও জানান তিনি।
গত শনিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়—আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতাদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত সংগঠনের সবধরনের কার্যক্রম, বিশেষত সাইবার স্পেসে, স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই পদক্ষেপের পেছনে কারণ হিসেবে নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, এবং চলমান ‘জুলাই আন্দোলন’ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষীদের সুরক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, "সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধ, জনগণের নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে এই সিদ্ধান্ত জরুরি ছিল।"
এই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে, সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এ পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ‘সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’–এর খসড়া চূড়ান্ত ও নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এই খসড়া অনুমোদন হয়।
বৈঠকের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, পুরোনো আইনে যেহেতু কোনো দলের বা সত্তার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার বিধান ছিল না, তাই বর্তমান বাস্তবতায় সেটি যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার নিষিদ্ধকরণসহ অন্যান্য অভিযোজনও আইনটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
বিশ্লেষণ:
এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে নয়—এটি দেশের রাজনৈতিক কাঠামো, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং নাগরিক অধিকার নিয়েও বড় প্রশ্ন তুলে ধরেছে। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, কারণ তারা রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল বা কার্যক্রম সীমিত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে পারে।
উপসংহার:
আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম এখন পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের হাতে নির্ভর করছে। তবে ইসি বলছে, তারা গেজেট ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না, যাতে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ থেকে তারা মুক্ত থাকতে পারে। এখন নজর থাকবে আজকের বৈঠকে এবং সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে গেজেট প্রকাশ করে কিনা তার ওপর। কারণ, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের মোড় আনতে পারে।