ঢাকা   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

বিনিয়োগকারীদের সুদের টাকা কোথায় যাচ্ছে? বিএসইসির নতুন সিদ্ধান্তে বিতর্ক তুঙ্গে!

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৭:৩৭, ৭ মে ২০২৫

আপডেট: ০৭:৫১, ৭ মে ২০২৫

বিনিয়োগকারীদের সুদের টাকা কোথায় যাচ্ছে? বিএসইসির নতুন সিদ্ধান্তে বিতর্ক তুঙ্গে!

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের নামে জমা থাকা অর্থ “একক সমন্বিত গ্রাহক হিসাব” বা সিসিএতে রাখা হয়। এই অর্থে ব্যাংক থেকে যে সুদ আসে, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। বিনিয়োগকারীরা মূলধনের মালিক হলেও এ সুদের ওপর তাদের সরাসরি অধিকার ছিল না। একইভাবে, ব্রোকার হাউসগুলোও এই সুদকে পুরোপুরি নিজেদের আয়ের উৎস হিসেবে দাবি করতে পারত না।

বছরের পর বছর ধরে এই সুদের অর্থ ব্রোকারদের মাধ্যমে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে এবং করও দেওয়া হয়েছে। তবে এবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এই বিতর্কিত ব্যবস্থার সংস্কারে উদ্যোগ নিয়েছে। বিএসইসি বলছে, এই সুদের অর্থ কাউকে ব্যক্তিগতভাবে দেওয়া যাবে না এবং এর ব্যবহারেও একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামো থাকতে হবে।

এই লক্ষ্যেই সম্প্রতি বিএসইসি একটি খসড়া বিধিমালা প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, সিসিএতে জমা সুদের অর্থের ২৫ শতাংশ যাবে স্টক এক্সচেঞ্জের ইনভেস্টরস প্রটেকশন ফান্ডে এবং বাকি ৭৫ শতাংশ ব্যয় হবে বিনিয়োগকারীদের শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে।

তবে এই খসড়াকে ঘিরে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, যেহেতু সুদের উৎস বিনিয়োগকারীদের মূলধন, তাই তাদের সম্মতি ছাড়া এ অর্থ অন্য খাতে ব্যয় করাকে প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করা হচ্ছে। তদুপরি, বিনিয়োগ শিক্ষায় এই অর্থ কতটা কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হবে এবং এই ব্যবস্থার তদারকি কাদের হাতে থাকবে, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

বিএসইসি অবশ্য জানিয়েছে, এই খসড়া প্রকাশ করে জনমত আহ্বান করা হয়েছে। ১২ মে পর্যন্ত ওয়েবসাইটে যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে মতামত বা আপত্তি জানাতে পারবে।

তবে বাজার সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করছেন, এটি এক ধরনের “সম্পদ স্থানান্তর” প্রক্রিয়া, যেখানে বিনিয়োগকারীদের আয়ের অংশ অন্য খাতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, অথচ তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকছে না। এই সিদ্ধান্ত ব্রোকারদের ওপরও বড় প্রভাব ফেলবে, কারণ সিসিএর সুদ থেকে তারা নিয়মিত আয় করতেন। এই আয়ের উৎস বন্ধ হলে তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

বর্তমানে বাজারে যখন আস্থার সংকট চলছে, তখন এমন সিদ্ধান্ত পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। এখন প্রশ্ন উঠছে—বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার নামে যে অর্থ অন্য খাতে খরচ হচ্ছে, তা কি সত্যিই তাদের উপকারে আসবে, নাকি এটি হয়ে উঠবে আরেকটি অস্বচ্ছ অর্থ ব্যবস্থাপনা?