facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২৭ জুলাই শনিবার, ২০২৪

Walton

সাংসদদের স্কুল কমিটির সভাপতি মনোনীত হওয়ার সুযোগ ফিরছে না


০৭ নভেম্বর ২০১৬ সোমবার, ১১:৫৯  এএম

শেয়ার বিজনেস24.কম


সাংসদদের স্কুল কমিটির সভাপতি মনোনীত হওয়ার সুযোগ ফিরছে না

স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদে স্থানীয় এমপির সভাপতি পদে মনোনীত হওয়ার সুযোগ বন্ধে হাই কোর্টের দেওয়া রায় আপিল বিভাগেও বহাল রয়েছে।

হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল সোমবার খারিজ করে দিয়েছে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের বেঞ্চ।  

এর ফলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সভাপতি মনোনীত হওয়া ও বিশেষ কমিটি গঠনের বিধান সর্বোচ্চ আদালতের রায়েও বাতিল হয়ে গেল।

গত জুনে হাই কোর্ট রায় দেওয়ার পর তা স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছিল ভিকারুননিসা নূন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তা শুনে আপিল বিভাগ সে সময় ‘নো অর্ডার’ দেয়।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তখনই জানিয়েছিলেন, ‘নো অর্ডার’ হওয়ায় হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল চাওয়ার সুযোগ আছে এবং সেই সুযোগ তারা নেবেন।

লিভ টু আপিলও খারিজ হয়ে যাওয়ায় এখন কেবল রিভিউ চাওয়ার সুযোগ রয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ বা পক্ষভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে। সে সুযোগ তারা নেবে কি না, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ পরিচালনার জন্য গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর বিশেষ কমিটি গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ চলতি বছর রিট আবেদনটি করেন।

তার যুক্তি ছিল, ওই প্রবিধানমালার ৩৯ বিধান অনুসারে এডহক কমিটির মেয়াদ ছয় মাস। অথচ ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ এ পর্যন্ত চার বার এডহক ও দুই বার বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। এটি ৩৯ বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৯ জানুয়ারি হাই কোর্ট রুল দেয়। রুলে ওই কমিটি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

এরপর ২০০৯ সালের মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা এর ৫ ও ৫০ বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সম্পূরক আবেদন করেন ইউনুছ আলী।

বিধান ৫ তে গভর্নিং বডির সভাপতি মনোনয়ন বিষয়ে এবং বিধান ৫০ বিশেষ ধরনের গভর্নিং বা ম্যানেজিং কমিটি গঠনের বিষয়ে বলা আছে।

রিট আবেদনকারীর যুক্তি ছিল, ওই দুটি বিধান ১৯৬১ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধ্যাদেশের ৩৯(২)(৬) এবং সংবিধানের ১১, ২৬, ২৭, ৩১ ও ৬৫ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

প্রবিধানমালার ২ বিধান

১৯৬১ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধ্যাদেশের ৩৯ এর ক্ষমতাবলে ২০০৯ সালের ৮ জুন ‘মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা-২০০৯’ প্রণয়ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ঢাকা বোর্ডের জন্য করা এই প্রবিধানমালার ৫ বিধিতে গভর্নিং বডির সভাপতি মনোনয়ন এবং ৫০ বিধানে বিশেষ ধরনের গভর্নিং বা ম্যানেজিং কমিটি গঠন বিষয়ে বলা রয়েছে।

গভর্নিং বডির সভাপতি মনোনয়ন : (১) কোনো স্থানীয় নির্বাচিত সংসদ সদস্য তাহার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এমন সংখ্যক উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্বগ্রহণ করিতে পারিবেন যেন ওই এলাকায় অবস্থিত , এই প্রবিধানমালার আওতাভুক্ত নয় এরূপ অন্যান্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ , তাহার এরূপ দায়িত্ব গ্রহণ করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা চার এর অধিক না হয়।

(২) উপ-বিধান ১ এর অধীন সভাপতির দায়িত্বগ্রহণের জন্য স্থানীয় নির্বাচিত সংসদ সদস্য, তাহার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত যে সকল উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব গ্রহণ করিতে ইচ্ছুক তাহার উল্লেখসহ লিখিতভাবে এই প্রবিধানমালার অধীন বোর্ডের চেয়ারম্যানের নিকট তাহার অভিপ্রায় ব্যক্ত করিবেন এবং উক্ত অভিপ্রায়পত্র সংশ্লিষ্ট বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানসমূহের সভাপতি হিসেবে তাহার মনোনয়নরূপে গণ্য হবে।

বিধান ৫০ এ রয়েছে: “বিশেষ ধরনের গভর্নিংবডি বা ম্যানেজিং কমিটি-বিশেষ পরিস্থিতিতে বোর্ড এবং সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কোনো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ ধরনের গভর্নিং বডি বা, ক্ষেত্রমতে ম্যানেজিং কমিটি করা যাইবে।

বাংলাদেশের সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে রয়েছে প্রশাসনে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণের বিষয়ে।

অনুচ্ছেদ ১১: প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে।

সম্পূরক এই আবেদনের শুনানি নিয়ে ওই দুই বিধান বিষয়ে ৬ এপ্রিল আরেকটি রুল দেয় হাই কোর্ট।

এসব রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ৮ জুন বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাই কোর্ট বেঞ্চ রায় দেয়।

রায়ে হাই কোর্ট আইনপ্রণেতাদের নিজের নিজের নির্বাচনী এলাকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনোনীত হওয়ার বিধানটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করে।

একইসঙ্গে ২০০৯ সালের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালার বিশেষ কমিটি গঠনের ৫০ বিধানটিও সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হয়।

ভিকারুননিসা পরিচালনায় গঠিত বিশেষ কমিটি অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে নতুন করে এডহক কমিটি করে ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন দিতে বলা হয় ওই রায়ে।

হাই কোর্টের ওই রায় স্থগিত চেয়ে ভিকারুননিসা স্কুল কর্তৃপক্ষ আপিল বিভাগে গেলে ১২ জুন তাতে ‘নো অর্ডার’ আসে। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন করলেও সর্বোচ্চ আদালতে তা নাকচ হয়ে গেল।-বিডিনিউজ  

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: