শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ খাতের প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড এখন চরম অনিশ্চয়তার মুখে। বছরের পর বছর লোকসান জমতে জমতে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। ২০২৫ সালের জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে কোম্পানিটির সক্ষমতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলে ‘অ্যাডভার্স ওপিনিয়ন’ বা প্রতিকূল মতামত দিয়েছেন নিরীক্ষকরা, যা কোনো কোম্পানির জন্য সবচেয়ে নেতিবাচক সংকেত হিসেবে ধরা হয়।
নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান আশরাফ উদ্দিন অ্যান্ড কোং-এর পার্টনার মোহাম্মদ শিব্বির হোসেনের স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেন্ট্রাল ফার্মার পুঞ্জীভূত লোকসান প্রায় পরিশোধিত মূলধনের সমান হয়ে গেছে। অর্থাৎ, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করা অর্থের বড় অংশ ইতোমধ্যেই লোকসানে গিলে খাওয়া হয়েছে। যদিও কোম্পানির দাবি, তাদের পর্যাপ্ত সম্পদ রয়েছে, তবে অডিটরদের মতে—দৈনন্দিন কার্যক্রম চালানোর মতো নগদ অর্থ প্রতিষ্ঠানটি নিজের ব্যবসা থেকে সৃষ্টি করতে পারছে না।
অডিট রিপোর্টে কোম্পানির ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার বেশ কয়েকটি দিক স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো—দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিপুল অঙ্কের কর বকেয়া। পাশাপাশি উৎপাদন ব্যয়ের তুলনায় বিক্রয় আয় কম হওয়ায় কারখানার সক্ষমতা পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না, যা লোকসান আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এ ছাড়া কোম্পানির ওষুধ উৎপাদনের লাইসেন্স এখনো নবায়ন হয়নি। একই সঙ্গে ডিএসই লিস্টিং ফি ও সিডিবিএল ফি বকেয়া থাকায় ভবিষ্যতে শেয়ার লেনদেন স্থগিত বা এমনকি ডি-লিস্টিংয়ের ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে। এসব গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি আর্থিক প্রতিবেদনে যথাযথভাবে তুলে না ধরায় অডিটররা একে ‘অ্যাডভার্স ওপিনিয়ন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যা একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক বার্তা।
তবে এসব নেতিবাচক পর্যবেক্ষণের বিপরীতে ভিন্নমত জানিয়েছেন কোম্পানির সচিব মো. তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, সেন্ট্রাল ফার্মার উৎপাদন কার্যক্রম চালু রয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানটি টিকিয়ে রাখার বিষয়ে তারা আশাবাদী। লাইসেন্স নবায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং এনবিআরের বকেয়া পরিশোধ নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। সাময়িক লোকসান ও নেতিবাচক ইপিএস থাকলেও কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাবে—এমন আশঙ্কার কোনো কারণ নেই বলেও তিনি দাবি করেন।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে সেন্ট্রাল ফার্মার আর্থিক সংকট আরও গভীর হতে পারে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় ঝুঁকি হয়ে উঠবে।
























