ঢাকা   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

যেভাবে শেয়ার কেনাবেচা করে কোটি কোটি টাকা আয়ের সুযোগ

শেয়ার বিজনেস কী?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৫৪, ৬ জানুয়ারি ২০১৮

যেভাবে শেয়ার কেনাবেচা করে কোটি কোটি টাকা আয়ের সুযোগ

রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা

 

বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী যে স্টাইলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে থাকেন ভারতের রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা তাদের থেকে অনেকটাই ব্যতিক্রম।

ঊর্ধ্বমুখী বাজারে শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা নিতে হয়। মন্দাবাজারে শেয়ার কিনে সমন্বয় করতে হয়। এছাড়া লোকসান এভারেজতো রয়েছেই। কিন্তু এসব কোনোকিছুরই মধ্যে নেই রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা। এই টেকনিক থেকে সম্পূর্ণ বিপরীতে তার অবস্থান।

ভারতের ইনভেস্টর এবং ট্রেডার হিসেবে ইতিমধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা। ভারতের অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম রেয়ার এন্টারপ্রাইজের পার্টনার হিসেবে তিনি নিজেই তার পোর্টফলিও ম্যানেজ করেন। ইন্ডিয়া টু ডে ম্যাগাজিনের মতে তিনি “pin-up boy of the current bull run”। এছাড়া দ্য ইকোনমিক টাইমস তাকে “Pied Piper of Indian bourses” বলে আখ্যায়িত করেছে। ফোর্বসের তথ্য মতে, তিনি ভারতের ৫৩তম ধনী এবং তার ধন সম্পদের পরিমাণ ২৪০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবনী ও ক্যারিয়ার

১৯৬০ সালের ৫ জুলাই ভারতের মুম্বাইয়ের একটি মারওয়ারি পরিবারে জন্ম রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালার। তার বাবা ছিলেন ইনকাম ট্যাক্স অফিসার। তিনি সিডেমহাম কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করে চ্যাটার্ড অ্যাকাউন্ট কোর্স সম্পন্ন করেন। ভারতের এপটেক লিমিটেড এবং হাঙ্গামা ডিজিটাল ডিজিটাল মিডিয়া এন্টারটেইনমেন্ট প্রা: লিমিটেডের চেয়ারম্যান হচ্ছেন রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা। এছাড়া তিনি বিভিন্ন ভারতীয় কোম্পানির যেমন প্রাইম ফোকাস লিমিটেড, জিওজিৎ বিএনপি পরিবাস ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড, বিলকেয়ার লিমিটেড, প্রাজ ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড, প্রভোগ ইন্ডিয়া লিমিটেড, কনকর্ড বায়োটেক লিমিটেড, ইনোভেসিন্থ টেকনোলজিস লিমিটেড, মিডডে মাল্টি মিডিয়া লিমিটেড, নাগরঝুনা কন্সট্রাকশন লিমিটেড, ভাইসরয় হোটেলস লিমিটেড এবং টপস সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে রয়েছেন।

২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালার হাতে থাকা শেয়ার দর প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যায়। এই লোকসান থেকে তিনি ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই অর্থাৎ মাত্রই তিনমাসেই বেরিয়ে আসেন।

রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালার ট্রেডিং করতেন কীভাবে

০১. স্টক এক্সচেঞ্জে যারা ভালো শেয়ার ব্যবসায়ী রয়েছেন তাদের শেয়ার ব্যবসায়ের নির্ভুলতা ৪০ শতাংশেরও কম হয়ে থাকে। আমি যদি মনে করি কোনো শেয়ারের দর বুলিশের দিকে যাচ্ছে এবং এর দর আরো বাড়তে পারে তখন আমি ঐ শেয়ারটি কিনে ফেলি। যদি ঐ শেয়ারটির দর আরো উপরে উঠতে থাকে তাহলে আমার কাছে মনে হয় আমি সঠিক পথে এগুচ্ছি। যদি শেয়ারটির দর বাড়তে থাকে তখন আমি পূর্ব পরিকল্পনা করি এভাবে যে, যখন শেয়ারটির দর ১০০ টাকা তখন আমি কিছু ক্রয় করি, যখন ১০৫ টাকা তখন আবার কিনি,১১০ টাকায় যখন পৌছায় তখন আরো শেয়ার কিনে ফেলি। ট্রেডিং মূলত মোমেনটাম। মার্কেট যদি উপরে যায় তখন কেনা এবং মার্কেট নিচের দিকে নামলে বিক্রি করা এটা স্বল্প,মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সব বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রযোজ্য।

০২। আমি আমার লোকসানে থাকা শেয়ারে এভারেজ কখনো করি না। যদি কোনো শেয়ারের দর ৯০ টাকায় হয় এবং এর দর আরো বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু দেখা যায় কোম্পানির শেয়ার ৪-৫% কমে যায় তখন আমি ঐ শেয়ারে এভারেজ করি। তবে ট্রেডিংয়ে এ ঘটনা না ঘটে তবে এভারেজ না করাই ভালো।

০৩। অনেক শেয়ার সর্বোচ্চ দামে হাতে থাকা স্বত্ত্বেও বিক্রি করতে নেই। কারণ শেয়ারের সর্বোচ্চ দাম কোনটি এটা কেউ জানে না।

০৪। যদি স্টকের প্রাইস অনুকূলে থাকে তাহলে সেটি ধরে রাখতে হয়। বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী মুনাফা তোলায় ব্যস্ত থাকে। এ কারণেই ১০ লাখ বিনিয়োগকারীর মধ্যে মাত্র গুটি কয়েক বিনিয়োগকারী এ মার্কেটে টাকা কামাতে পারেন।

০৫। আপনাকে ট্রেডিং করার জন্য এতো এক্সপার্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই। মোটামুটি মার্কেটের নিয়মকানুন জানলেই হলো। শুধুমাত্র দুটি বিষয়ের ওপর খেয়াল রাখতে হবে। প্রথমত আপনি কত দামে শেয়ারটি কিনতে চান। দ্বিতীয়ত কি পরিমাণ মুনাফা করে বের হতে চান।

০৬। টার্গেট প্রাইস বলতে আসলে কিছু নেই। আমি যখন কোনো শেয়ার কিনি এবং সেটির দর অনেক বেড়ে যায় তখন আমি দেখি এই দরটি অস্বাভাবিক কিনা। যদি অস্বাভাবিক মনে করি তখন আমি সতর্ক হয়ে যাই। এক্ষেত্রে টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস খুব শক্ত হতে হয়। যদি মনে করি যে এর প্রাইসের মুভমেন্ট শেষ হয়ে গেছে তখন সে শেয়ারটি বিক্রি করে বের হয়ে যাই।

০৭। আপনি সবসময় মুনাফা করবেন এটা ভাবাটাই বোকামি। আপনাকে লোকসান বহন করার ক্ষমতা থাকতে হবে। আমি প্রতিবছর মুনাফা করি না। ১৯৯৪ সাল থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত এই সময় কালে আমি শেয়ার মার্কেটে ভালো করতে পারিনি। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯২ সাল, ২০০৩ থেকে ২০০৭ সাল, ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত যে সময় ছিলো ঐখানে আমি অনেক মুনাফা করি। তাই মার্কেট যদি আপনার অনুকূলে না থাকে তাহলে লোকসান দিয়ে বের হয়ে যাওয়া উত্তম।

০৮। ট্রেডিংয়ে আমি কোটি টাকা বিনিয়োগ করি না। আমি এক লাখ রুপি ট্রেডিংয়ে ব্যবহার করি। এছাড়া ট্রেডিংয়ে আমি লিভারেজ ব্যবহার করি। অর্থাৎ লিভারেজের ফায়দা আমি নেই। আমার নেট ক্যাপিটাল হচ্ছে ১ লাখ রুপি। আর বাকি যে টাকা সেগুলো লিভারেজের সাথে ঋণ করা।

০৯। ট্রেডিংয়ের জন্য ছোটো অ্যামাউন্ট ব্যবহার করতে হয়। বড় অ্যামাউন্ট দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য ব্যবহার করতে হয়।