facebook twitter You Tube rss bangla fonts

ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪

Walton

চলতি বছরেই চালু কমোডিটি এক্সচেঞ্জ : বৈচিত্র্য আসবে পুঁজিবাজারে


১৯ মার্চ ২০২৩ রবিবার, ১০:১০  পিএম

স্টাফ রিপোর্টার

শেয়ার বিজনেস24.কম


চলতি বছরেই চালু কমোডিটি এক্সচেঞ্জ : বৈচিত্র্য আসবে পুঁজিবাজারে

পুঁজিবাজারে ভোগ্য পণ্য কেনাবেচা তথা কমোডিটি এক্সচেঞ্জের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের মধ্যে গম, তুলা ও সোনা কেনাবেচার সুযোগ রেখে দেশে প্রথম পণ্য বিপণনের এই মাধ্যম চালু করতে কাজ করছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। এতে এরই মধ্যে সায় দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু হলে দেশি-বিদেশি সব ক্রেতা-বিক্রেতা ডিজিটাল প্ল্যাটফরম ব্যবহার করে পণ্য কেনাবেচার সুযোগ পাবেন। এতে পণ্য কেনাবেচায় স্বচ্ছতার পাশাপাশি ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে। কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু হলে পণ্যবাজার স্থিতিশীল হওয়ার পাশাপাশি পুঁজিবাজারে পণ্যসেবায় বৈচিত্র্য আসবে বলে মনে করছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু হলে পণ্যের উৎপাদক ও ভোক্তা সঠিক দামে পণ্য কেনাবেচা করতে পারবেন। অর্থনীতিতে নতুন গতি আসবে। বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য কমে আসবে।

প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপালসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বা পণ্য বিনিময় কেন্দ্র চালু থাকলেও ছিল না বাংলাদেশে। সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছর বাংলাদেশ প্রবেশ করবে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের যুগে।

সিএসই সূত্র জানায়, শেয়ারবাজারে যেভাবে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে শেয়ার বা ঋণপত্র কেনাবেচা হয়, সেভাবেই সিএসইতে কেনাবেচা হবে সোনা, রুপা, তেল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, ধান, চাল, পাট প্রভৃতি পণ্য। ফসল তোলার পর ক্ষতির ঝুঁকি কমানো, দক্ষ ঋণ ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক দর নির্ধারণ ব্যবস্থা তৈরি করা এবং লেনদেন ও বিপণন ব্যয় কমিয়ে আনা সহজ হবে। তবে প্রথম দিকে গম, তুলা ও সোনা কেনাবেচা দিয়ে দেশে চালু হবে কমোডিটি মার্কেট।


যেভাবে হবে কেনাবেচা

সিএসইর কমোডিটি প্ল্যাটফরমে বিক্রেতারা পণ্যের সার্টিফিকেট (মান সনদসহ) বিক্রি করবেন। এ ক্ষেত্রে স্বর্ণ কেনাবেচা হবে গ্রাম হিসাবে। আর অন্যান্য পণ্য কেজি বা টন হিসাবে বিক্রি করতে পারবেন। বিক্রেতাকে দেওয়া মান সনদ দেখেই পণ্যের গুণগত মান বিষয়ে নিশ্চিত হবেন ক্রেতারা। এরপর কাঙ্ক্ষিত পণ্য কিনবেন ক্রেতা। শুধু দেশ থেকেই নয়, অন্য দেশ থেকেও কেনাবেচা করা যাবে পণ্য। এই কেনাবেচার প্রক্রিয়াটি হবে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে। তবে মূল পণ্যটি থাকবে কোনো গুদামে বা মাঠে। সেখান থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর এটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি বা হস্তান্তর হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্রয় আদেশ ও মান সনদ অনেকবার কেনাবেচা করার সুযোগ থাকবে। তবে নির্দিষ্ট সময় পর পণ্য ক্রয়ের আদেশ যার হাতে থাকবে, তাঁকে বিক্রীত পণ্য বুঝিয়ে দেবেন বিক্রেতা।

সিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম ফারুক বলেন, ‘কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু হলে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এতে ভোক্তা ও বিক্রেতা উভয়ই সুবিধা পাবে। যেমন—ধরুন আমাদের স্থানীয় বাজারে ছয় টাকায় আলু বিক্রি হয়। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত ঘুরে সেই আলুই ভোক্তা পর্যায়ে ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়। কমোডিটি মার্কেট চালু হলে বাজারে স্বচ্ছতা ফিরবে, মধ্যস্বত্বভোগীর এ দৌরাত্ম্য থাকবে না।’

তিনি বলেন, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু হলে পুঁজিবাজারেও বৈচিত্র্য আসবে। বিনিয়োগকারীরা নতুন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন। বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। কমোডিটি মার্কেট চালু হলে বাজারে নতুন উপযোগ সৃষ্টি হবে। এতে বিনিয়োগের ঝুঁকি হ্রাস পাবে।

থাকবে না মধ্যস্বত্বভোগী

কমোডিটি এক্সচেঞ্জেও শেয়ারবাজারের মতো নির্দিষ্ট ও অনুমোদিত ব্রোকারের মাধ্যমে পণ্য কেনাবেচা করতে হবে। থাকতে হবে নিজ বা প্রতিষ্ঠানের নামে অ্যাকাউন্ট। ব্রোকারের মাধ্যমে বিক্রেতা পণ্য বিক্রির আদেশ দেবেন। অন্যদিকে ক্রেতা তাঁর ব্রোকারের মাধ্যমে ক্রয় আদেশ দেবেন। উভয়ের কেনাবেচার অর্ডার ও দাম প্রদর্শিত হবে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের ইলেকট্রনিক বা অনলাইন প্ল্যাটফরমে। ক্রেতা-বিক্রেতার দর মিললে হবে পণ্য লেনদেন।

চুক্তি অনুযায়ী ফিজিক্যাল ডেলিভারি সম্পন্ন করতে পণ্যটি যে ওয়্যারহাউস বা কোল্ড স্টোরেজে রয়েছে, ক্রেতার অর্ডার অনুযায়ী ওই পণ্য পরিবহনে পৌঁছে দেওয়া হবে। অর্থাৎ পণ্য কেনাবেচা হবে সরাসরি কৃষক বা উৎপাদনকারী ও বিক্রেতার মধ্যে। মধ্যে থাকবে না কোনো মধ্যস্বত্বভোগী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, নিয়ম-নীতির ভিত্তিতে দেশে কমোডিটি মার্কেট গঠন করা হলে যাঁরা বিকল্প বিনিয়োগ (অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট) করতে চান তাঁদের বিনিয়োগের সুযোগ বাড়বে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে ফ্ল্যাট-প্লট, শেয়ার মার্কেট (ইকুইটি মার্কেট), বন্ড, সরকারি প্রাইজ বন্ড ও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেন বিনিয়োগকারীরা। এ ছাড়া কেউ কেউ এফডিআর করেন। নতুন বিনিয়োগের সুযোগ না থাকায় দেশ থেকে প্রতিবছর অর্থ পাচার হয়ে হচ্ছে। কমোডিটি মার্কেট গঠন করা হলে বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগের সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি ভোক্তারাও ন্যায্য মূল্যে পণ্য হাতে পাবে।’

বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘আমরা সিএসইকে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ গঠনের অনুমতি দিয়েছি। সিএসই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। সেই সঙ্গে সিএসইকে কমোডিটি মার্কেটে অংশগ্রহণকারীদের জন্য সচেতনতামূলক কর্মসূচি, ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণ এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে পণ্যের যথাযথ তথ্য সংগ্রহ ও সামগ্রিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং কমোডিটি এক্সচেঞ্জ গঠনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত সব প্রক্রিয়া মেনে এটি চালু করা হবে। আশা করা যাচ্ছে, এ বছরের মধ্যেই কাঙ্ক্ষিত কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু হবে।

ভারতীয় কম্পানিকে পরামর্শক নিযুক্ত
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু করতে ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের (এমসিএক্স) সঙ্গে জোট করেছে সিএসই। এক্সচেঞ্জ চালুর জন্য ভারতের মুম্বাইভিত্তিক কমোডিটি এক্সচেঞ্জ এমসিএক্সকে মূলত পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান সম্ভাব্যতা যাচাই করবে। একই সঙ্গে প্রাথমিকভাবে কোন কোন পণ্য নিয়ে এই এক্সচেঞ্জ চালু করা যায়, তার গাইডলাইনও দেবে। তবে কমোডিটি এক্সচেঞ্জটি শতভাগ সিএসইর মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় চলবে, যেখানে এমসিএক্স পরামর্শক হিসেবে শুধু পাঁচ বছরের জন্য কাজ করবে।

ভারত
২০০৩ সালে কার্যক্রম শুরু করা এমসিএক্স এখন ভারতের সবচেয়ে বড় কমোডিটি এক্সচেঞ্জ। এটি ভারত সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন। ভারতের কমোডিটি মার্কেটের প্রায় ৮৮ শতাংশ লেনদেন হয় এমসিএক্সে। এই মার্কেটে প্রতিদিন গড়ে ৩৪ হাজার কোটি টাকার চুক্তিপত্র কেনাবেচা হয়। ভারতের কমোডিটি মার্কেটে ২০২২-২৩ সালে এমসিএক্সের মাধ্যমে ৯৬.৮ শতাংশ ফিউচার ট্রেড হয়েছে।

পাকিস্তান
২০০৭ সালের ১১ মে পাকিস্তানে সোনা লেনদেনের মাধ্যমে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু হয়, যা পাকিস্তান মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জ (ন্যাশনাল কমোডিটি এক্সচেঞ্জ লিমিটেড) নামে পরিচিত। পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালের মার্চে ধান (ইরি-৬) কমোডিটি এক্সচেঞ্জের নতুন পণ্য হিসেবে যুক্ত হয়। ২০০৯ সালে পাকিস্তানের কমোডিটি এক্সচেঞ্জে ক্রুড অয়েল ও রুপা নতুন পণ্য হিসেবে যুক্ত হয়। এ ছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন কৃষিপণ্যও কমোডিটি এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়। এক্সচেঞ্জটিতে ২০২১-২২ অর্থবছরে তিন লাখ ৮৬ হাজার ৭৪৫ কোটি রুপি লেনদেন হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ৩২ হাজার ২২৮ কোটি টাকার লেনদেন হয় এক্সচেঞ্জটিতে।

নেপাল
২০০৭ সালে নেপালে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের যাত্রা শুরু হয়, যা মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জ নেপাল লিমিটেড নামে পরিচিত। এমইএক্স ২০০৯ সালের ৫ জানুয়ারি তাদের লেনদেন কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে এক্সচেঞ্জটিতে বিভিন্ন কৃষিপণ্য (কোকো, কফি, ভুট্টা, তুলা, সয়াবিন তেল, চিনি, গম), জ্বালানি (ব্রেন্ট ক্রুড, অপরিশোধিত তেল), দামি ধাতুসহ গুরুত্বপূর্ণ পণ্য লেনদেন হচ্ছে।-সূত্র : কালের কণ্ঠ।

শেয়ারবিজনেস24.কম এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট বিনা অনুমতিতে ব্যবহার বেআইনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন: