
বীমা খাতে চলছে ভয়াবহ অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের মহোৎসব! আর এইসব অপকর্মের পেছনে বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)-এর নিষ্ক্রিয়তা ও দুর্বলতাকে। সম্প্রতি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তরের (এনএসআই) একটি প্রতিবেদনে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আইন ভেঙে দায়িত্ব পালন করছেন বিভিন্ন বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তারা (সিইও)। অথচ আইডিআরএ এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলাফল, কোম্পানিগুলোতে স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি এবং নৈতিক অবক্ষয় চরমে পৌঁছেছে।
এই প্রতিবেদন পেয়ে চলতি বছরের ৪ জুন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে গৃহীত পদক্ষেপের অগ্রগতি নিয়মিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে—বীমা কোম্পানিগুলোর চেয়ারম্যানরা ব্যক্তিস্বার্থে নিজের ঘনিষ্ঠজনদের সিইও পদে বসাচ্ছেন। এমনকি, আইডিআরএর অনুমোদন না পেয়েও তারা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এতে প্রিমিয়ামের টাকা যেমন অপচয় হচ্ছে, তেমনি গ্রাহকদের স্বার্থও মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
সবচেয়ে ভয়াবহ তথ্য হলো—অনেক কোম্পানিতে দীর্ঘদিন সিইও না থাকায় কোম্পানির স্বাভাবিক পরিচালনাও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এবং এই অনিয়মই অন্যান্যের জন্য ‘দৃষ্টান্ত’ তৈরি করছে!
প্রতিবেদনে যাদের বিরুদ্ধে সুপারিশ:
-
গার্ডিয়ান লাইফ
-
সোনালী লাইফ
-
মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ
-
কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স
-
রূপালী ইন্স্যুরেন্স
এই পাঁচটি শীর্ষ বেসরকারি কোম্পানির সিইওদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
কারা কতদিন ধরে দায়িত্বে আছেন:
-
গার্ডিয়ান লাইফ: শেখ রাকিবুল করিম (১ জানুয়ারি ২০২১ থেকে)
-
সোনালী লাইফ: মো. রফিকুল ইসলাম (২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ থেকে)
-
মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ: এসকে আব্দুর রশিদ (১ জুলাই ২০২৩ থেকে)
-
কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স: মোশাররফ হোসেন (১০ অক্টোবর ২০২৩ থেকে)
-
রূপালী ইন্স্যুরেন্স: ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া (২ জানুয়ারি ২০২৩ থেকে)
আইন অনুযায়ী, কোনো কোম্পানির সিইও পদ সর্বোচ্চ তিন মাস খালি রাখা যাবে, অতিরিক্ত তিন মাস অনুমোদন সাপেক্ষে বাড়ানো সম্ভব। এরপর পূর্ণকালীন সিইও নিয়োগ না হলে, আইডিআরএ প্রশাসক বসানোর ক্ষমতা রাখে। অথচ এই বিধান দীর্ঘদিন উপেক্ষিত।
গত জানুয়ারিতে গার্ডিয়ান লাইফ ও রূপালী ইন্স্যুরেন্সকে ৫ লাখ টাকা করে জরিমানা এবং ৬০ দিনের মধ্যে সিইও নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছিল আইডিআরএ। কিন্তু এখনও তা কার্যকর হয়নি।
ফলে প্রশ্ন উঠছে—আইডিআরএর ভূমিকা কি আদৌ নিরপেক্ষ ও কার্যকর, নাকি বীমা খাতের নীরব ‘সহযোগী’ হয়ে উঠেছে?
বিশ্লেষকদের মতে, আইডিআরএ যদি এখনই শক্ত অবস্থান না নেয়, তবে গোটা বীমা খাতই আরও গভীর দুর্নীতির দুষ্টচক্রে পড়ে যাবে, যার ভোগান্তি শেষ পর্যন্ত গ্রাহকদের ওপরই চাপবে।