ঢাকা   মঙ্গলবার ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৬ কার্তিক ১৪৩২

ঘোষণা দিলেও ডিভিডেন্ড নেই ১৭ কোম্পানির

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ২১ অক্টোবর ২০২৫

ঘোষণা দিলেও ডিভিডেন্ড নেই ১৭ কোম্পানির

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড় ধাক্কা দিয়েছে ডিভিডেন্ড বিতরণে ব্যর্থ ১৭টি তালিকাভুক্ত কোম্পানি। নিয়ম অনুযায়ী, বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) অনুমোদনের ৩০ দিনের মধ্যে ঘোষিত ডিভিডেন্ড শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বিতরণ করতে হয়। কিন্তু আট মাস পার হলেও এই কোম্পানিগুলো এখনো বিনিয়োগকারীদের হাতে সেই অর্থ পৌঁছে দিতে পারেনি। এতে বাজারে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

বিনিয়োগকারীদের এই ক্ষতির দায়ভার আসলে কার—কোম্পানি নাকি নিয়ন্ত্রক সংস্থা? প্রশ্নটি এখন ঘুরছে শেয়ারবাজারজুড়ে। কারণ, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এপ্রিল মাসেই এসব কোম্পানির সঙ্গে বৈঠক করেছিল। কিন্তু পাঁচ মাস পরও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি।

এই ব্যর্থতার জেরে ডিএসইর মূল বোর্ডের ১২টি কোম্পানি ইতোমধ্যে অবনমন হয়ে পড়েছে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে। এই শ্রেণিতে লেনদেনের সেটেলমেন্টে অতিরিক্ত একদিন সময় লাগে, যার ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই। বিএসইসির কর্মকর্তারা স্বীকার করছেন, এটি এক ধরনের “শাস্তি” যা আসলে কোম্পানির নয়, বিনিয়োগকারীদের ওপরই বর্তায়।

বাজারের তথ্য অনুযায়ী, লুব-রেফ (বাংলাদেশ), আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং, সাইফ পাওয়ার টেক, আমরা টেকনোলজিস ও ফরচুন সুজ ঘোষণা করেছিল মাত্র ১ শতাংশ ডিভিডেন্ড, কিন্তু সেটিও বিতরণ করা হয়নি। ওরিয়ন ফার্মা ও আমরা নেটওয়ার্কস ১০ শতাংশ, এসকে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ১.৭৫ শতাংশ এবং এসএস স্টিলস ২ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেও দেননি। আংশিক বিতরণ করেছে আফতাব অটো (১০% ঘোষণার মধ্যে মাত্র ১২.০৬%) ও এডভেন্ট ফার্মা (১% ঘোষণার মধ্যে ৪০.২১%)।

এসএমই মার্কেটেও একই চিত্র। বিডি পেইন্টস (১২%), ওরাইজা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ (৫%) ও মোস্তফা মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ (৪%) ঘোষণা করেও এক টাকাও দেয়নি বিনিয়োগকারীদের। হিমাদ্রি লিমিটেড (৭৭.৩৭%), বেঙ্গল বিস্কিটস (৬২.১৩%) ও মাস্টারফিড এগ্রোটেক (১৪.৫৯%) আংশিক বিতরণ করেছে।

যদিও বিএসইসি বলছে, এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম চলছে। কমিশনের পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম জানিয়েছেন, “যেসব কোম্পানি ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেও তা বিতরণ করেনি, তাদের পরিচালকদের শুনানিতে ডাকা হবে এবং কমিশন সভায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তবে কিছু ইতিবাচক উদাহরণও রয়েছে। আরএকে সিরামিকস, সি পার্ল, নাভানা সিএনজি ও জেনেক্স ইনফোসিস—এই চার কোম্পানি নির্ধারিত সময় পেরোলেও পরবর্তীতে ডিভিডেন্ড বিতরণ সম্পন্ন করেছে। আরএকে সিরামিকসের কোম্পানি সচিব জানিয়েছেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড সময়মতোই বিতরণ করা হয়েছিল, শুধু এনবিআর-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে হোল্ডিং কোম্পানির অংশে বিলম্ব হয়।

বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোম্পানির পরিচালকদের জবাবদিহিতার আওতায় না আনলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো সম্ভব হবে না। কারণ, “ডিভিডেন্ড কেবল বিনিয়োগকারীর অধিকার নয়, এটি করপোরেট বিশ্বাসযোগ্যতার প্রতিফলন।”