
ব্যবস্থাপনা সংকট, শ্রমিক অসন্তোষ ও চরম কর্মী ঘাটতির কারণে নির্ধারিত সময়ে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেড। মার্চ পর্যন্ত ২০২৪ অর্থবছরের নয় মাসের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কাছে তিন মাস সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সংকটের কেন্দ্রে ব্যবস্থাপনা ও শ্রমিক অসন্তোষ
কোম্পানির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি বছরের এপ্রিলের শেষ দিকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) সময় বৃদ্ধির আবেদন জানালেও এখন পর্যন্ত কোনো অনুমোদন মেলেনি। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা না দিলে প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা হারে জরিমানার বিধান রয়েছে।
ন্যাশনাল টি’র এক কর্মকর্তা জানান, গত বছরের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকে কোম্পানির অভ্যন্তরে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। পুরনো বোর্ড সদস্যদের অপসারণ, কর্মীদের বেতন পরিশোধে ব্যর্থতা এবং শ্রমিক অসন্তোষের কারণে চা বাগানগুলোতে অস্থিরতা তৈরি হয়। এ অবস্থায় আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে।
তিনটি বড় কারণ তুলে ধরা হয়েছে
বিএসইসিকে পাঠানো চিঠিতে ন্যাশনাল টি তিনটি বড় কারণ উল্লেখ করেছে সময় চাওয়ার পেছনে—
১. রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রশাসনিক রদবদল: ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাবে শিল্প মন্ত্রণালয়, কৃষি ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে বড় ধরনের প্রশাসনিক পরিবর্তন হয়। এতে মজুরি পরিশোধে জটিলতা দেখা দেয় এবং একাধিক চা বাগানে হিসাবরক্ষণ কার্যক্রমে বিলম্ব ঘটে।
২. বোর্ড সদস্যদের পদত্যাগ: গত বছরের আগস্টে চারজন স্বাধীন পরিচালক ও দুজন নির্বাচিত পরিচালক পদত্যাগ করেন। ফলে কোম্পানির বোর্ড ও কমিটিগুলো কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং তদারকি কার্যক্রমে মারাত্মক বাধা তৈরি হয়।
৩. কর্মী সংকট: বর্তমানে কোম্পানির অর্থ ও হিসাব বিভাগে মাত্র একজন সহকারী ব্যবস্থাপক ও তিনজন অফিস সহকারী রয়েছেন। এই সীমিত জনবল আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুতিতে উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।
নতুন ব্যবস্থাপনায় কিছুটা আশার আলো
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, সম্প্রতি কোম্পানির বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে। একজন নতুন চেয়ারম্যান, দুইজন নির্বাচিত পরিচালক, তিনজন স্বাধীন পরিচালক, নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কোম্পানি সচিব ইতোমধ্যে দায়িত্ব নিয়েছেন। শিগগিরই একজন প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) নিয়োগের প্রক্রিয়াও শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে, ন্যাশনাল টি তালিকাভুক্তি বিধিমালা ১৭(১) অনুযায়ী ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত নয় মাসের এবং ২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তিন মাস সময় বৃদ্ধির আবেদন জানিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ন্যাশনাল টি-র এই দীর্ঘসূত্রিতা শুধুই প্রতিষ্ঠানগত দুর্বলতা নয়, বরং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাঠামোগত সংকট ও জবাবদিহিতার অভাবের প্রতিফলন। তবে নতুন ব্যবস্থাপনা দল বাস্তব পরিবর্তন আনতে পারলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গা কিছুটা পুনঃপ্রতিষ্ঠা পেতে পারে।