ঢাকা   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

১০ মাসে আইপিওশূন্য শেয়ারবাজার: স্থবিরতায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:০৬, ১৭ জুন ২০২৫

সর্বশেষ

১০ মাসে আইপিওশূন্য শেয়ারবাজার: স্থবিরতায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট

দেশের শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে অচলাবস্থা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রায় ১০ মাস পার হলেও কোনো নতুন কোম্পানিকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন দেয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সাময়িক সূচক উত্থান দেখা গেলেও বাজারে কার্যত কোনো গতি ফিরেনি।

গত জুলাই-আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিএসইসির নেতৃত্ব পরিবর্তন হয়ে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। তার দায়িত্ব নেওয়ার সময় ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৫,৭৭৫ পয়েন্টে। দায়িত্ব পালনের ১০ মাস পরেও বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরেনি, বরং বাড়ছে অনিশ্চয়তা ও হতাশা। এর মধ্যে নতুন কোনো কোম্পানি আইপিওতে না আসা এই স্থবিরতার মাত্রা আরও বাড়িয়েছে।

নজিরবিহীন ‘আইপিও শূন্যতা’

বিএসইসির বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত একটিও আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়নি। উল্টো, এ সময়ের মধ্যে বাতিল করা হয়েছে ১৭টি আইপিও আবেদন—যা দেশের শেয়ারবাজার ইতিহাসে বিরল। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং ইস্যু ম্যানেজারদের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯–২০২৩ সময়কালে রেকর্ড সংখ্যক কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে বড় অঙ্কের মূলধন সংগ্রহ করেছিল। কিন্তু ২০২৩ সালের মাঝামাঝি থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ২০২৪ সালের মাঝামাঝি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এ প্রবাহ একেবারেই থেমে গেছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে কোনো কোম্পানি শেয়ারবাজার থেকে এক টাকাও উত্তোলন করতে পারেনি, যা বাজারের স্থবির অবস্থাকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।

প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি—উভয় বাজারেই স্থবিরতা

শেয়ারবাজারের দুটি স্তর—প্রাথমিক (প্রাইমারি) ও দ্বিতীয় স্তর (সেকেন্ডারি)—উভয় জায়গাতেই চলছে অচলাবস্থা। প্রাইমারি মার্কেট মূলত কোম্পানির আইপিওর মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহের মাধ্যম, যেখানে মন্দা থাকলে মূলত উদ্যোক্তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। কারণ তারা নতুন বিনিয়োগে মূলধন পেতে সমস্যায় পড়েন।

অন্যদিকে, সেকেন্ডারি মার্কেটে মন্দা অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কারণ এখানেই তারা প্রতিদিন শেয়ার কিনে-বেচে লাভ করতে চান। ফলে সেকেন্ডারি মার্কেটে দরপতন বা লেনদেন কমে যাওয়ার সরাসরি প্রভাব পড়ে তাদের সঞ্চয়ের ওপর।

বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিভঙ্গি ও ভবিষ্যতের ইঙ্গিত

কম আইপিও আসার কারণে লাভের সুযোগ হারালেও বিনিয়োগকারীদের সরাসরি আর্থিক ক্ষতি হয় না। তবে সেকেন্ডারি মার্কেটে মন্দা দীর্ঘ হলে তাদের আর্থিক ক্ষতি চরমে ওঠে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি স্থবিরতা কাটাতে হলে শুধু নেতৃত্ব পরিবর্তন নয়, বরং নীতিগত সংস্কার ও বাস্তবভিত্তিক প্রণোদনার বিকল্প নেই।

বিএসইসির তথ্যমতে, সর্বশেষ ২০২৪ সালে এনআরবি ব্যাংক, বেস্ট হোল্ডিং, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ ও টেকনো ড্রাগস আইপিওর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে মোট ৬৪৫ কোটি টাকা উত্তোলন করেছিল। এরপর এক বছরের বেশি সময় কেটে গেলেও আর কোনো কোম্পানির আইপিও অনুমোদন পায়নি।

এই অবস্থায় বাজারে তারল্য সংকট, আস্থা সংকট এবং বিনিয়োগে ঝুঁকি বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই বাজারের প্রাণ ফেরাতে দ্রুত আইপিও অনুমোদন, বাজারবান্ধব নীতিমালা এবং স্বচ্ছতাপূর্ণ পরিবেশ তৈরির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।

সর্বশেষ