ঢাকা   বৃহস্পতিবার ২২ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সূচক বাড়লেই সেল প্রেসারের হুমকি: আতঙ্কে শেয়ারবাজারে ঘূর্ণিপাক, বিনিয়োগকারীরা দিশেহারা

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:৩৮, ২১ মে ২০২৫

সূচক বাড়লেই সেল প্রেসারের হুমকি: আতঙ্কে শেয়ারবাজারে ঘূর্ণিপাক, বিনিয়োগকারীরা দিশেহারা

বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে এক অস্থির ও আতঙ্কজনক পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরে বিরাজ করছে। সূচক সামান্য বাড়লেই শুরু হয় ব্যাপক বিক্রির চাপ বা ‘সেল প্রেসার’, যার ফলে বাজার দ্রুত নেতিবাচক ধারায় ফিরে যায়। বুধবার (২১ মে) এই চিত্র আরও একবার স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে বাজারে। সূচক কিছুটা বাড়লেও দিন শেষে তা প্রায় আগের অবস্থানে নেমে আসে।

সকাল থেকে সূচকে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেলেও বড় বিনিয়োগকারীদের বিক্রির চাপে বাজারে কৃত্রিম দুর্বলতা তৈরি হয়। দিন শেষে ডিএসইএক্স সূচক মাত্র ৬ পয়েন্ট বেড়ে বন্ধ হয়। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, কিছু প্রভাবশালী গ্রুপ ইচ্ছাকৃতভাবে বাজার ঊর্ধ্বমুখী হলেই শেয়ার বিক্রি করে ‘সেল প্রেসার’ তৈরি করে, যা খুচরা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্কের জন্ম দেয়।

এই পরিস্থিতিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বাড়ছে। একদিকে বিএসইসি বাজার চাঙ্গা করতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে, অন্যদিকে বাজারের বাস্তবচিত্র বলছে, সেই উদ্যোগগুলোর অধিকাংশই বাজারবান্ধব বা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। বিশেষ করে বড় কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা, স্টেকহোল্ডারদের মতামত উপেক্ষা করে হঠাৎ সার্কুলার, এবং কর্পোরেট গভর্ন্যান্সে ঘাটতি—সব মিলিয়ে আস্থার সঙ্কট তৈরি হয়েছে।

ডিএসই সূত্র জানায়, অন্তবর্তী সরকারের শুরুতে যেখানে সূচক ছিল ৬,২০০ পয়েন্টে, তা এখন নেমে এসেছে ৪,৮০০ পয়েন্টের ঘরে। প্রতিদিনের লেনদেন ৩০০ কোটি টাকার নিচে অবস্থান করছে। এতে বাজার মূলধন কমে যাচ্ছে, বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মাত্রা বাড়ছে।

ব্লক মার্কেট: দুই কোম্পানির বড় লেনদেন

২১ মে ডিএসই ব্লক মার্কেটে ২৭টি প্রতিষ্ঠানের ২২ কোটি ৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় লেনদেন হয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন (৫.৮৮ কোটি টাকা), সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক (৪.৭৯ কোটি টাকা) ও ফাইন ফুডস (২.২৯ কোটি টাকা)–এই তিন প্রতিষ্ঠানে।

লেনদেনের শীর্ষে ব্র্যাক ব্যাংক

বুধবার ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষে ছিল ব্র্যাক ব্যাংক, যার মোট লেনদেন দাঁড়ায় ১৮.৭৩ কোটি টাকা। দ্বিতীয় স্থানে ছিল ওরিয়ন ইনফিউশন (১৭.৯২ কোটি টাকা) ও তৃতীয় স্থানে বীচ হ্যাচারি (১২.৯২ কোটি টাকা)। এ ছাড়া তালিকায় ছিল সিটি ব্যাংক, স্কয়ার ফার্মা, মিডল্যান্ড ব্যাংক, শাইনপুকুর সিরামিক্স, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার প্রভৃতি কোম্পানি।

দরপতনের শীর্ষে প্রগ্রেসিভ লাইফ

আজকের দরপতনের শীর্ষে ছিল প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, যার দর কমেছে ৬.৫০ শতাংশ। এরপর জিল বাংলা ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ছিল যথাক্রমে ৫.৫৩ ও ৫.৪১ শতাংশ দরপতন নিয়ে। তালিকায় আরও রয়েছে ইউসিবি, বারাকা পতেঙ্গা, প্রাইম ফাইন্যান্স, শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ ইত্যাদি।

দরবৃদ্ধির শীর্ষে ন্যাশনাল টি

এদিন সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে ন্যাশনাল টি কোম্পানির, যার দর ৯.৯৪ শতাংশ বেড়ে প্রথম স্থানে উঠে আসে। এরপর রয়েছে লেগেসি ফুটওয়্যার (৯.৮৫%), ইবিএল এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড (৮.৫৭%) এবং সোনারগাঁও টেক্সটাইল, ডেসকো, গ্লোবাল হেভি কেমিক্যাল ইত্যাদি।

সমাধানে কী লাগবে?

বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে হলে একতরফা নীতিনির্ধারণ নয়, বরং স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নীতি গ্রহণ জরুরি। একইসাথে দরকার বাজারে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, বড় বিনিয়োগকারীদের অস্বচ্ছ বিক্রিচাপের মনিটরিং, মৌলভিত্তিক আইপিও অনুমোদন ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকে উৎসাহ প্রদান।

বাংলাদেশের শেয়ারবাজার এক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। তবে এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে সময়োপযোগী, আস্থাবান এবং অংশগ্রহণমূলক বাজারব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বাজার সংশ্লিষ্টদের সম্মিলিত কার্যকর উদ্যোগই হতে পারে ঘুরে দাঁড়ানোর একমাত্র পথ।