ঢাকা   বুধবার ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আইপিওতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য সুখবর: কোটা বাড়িয়ে ৬০ শতাংশ, আসছে আরও সংস্কার

শেয়ারবাজার

শেয়ারবিজনেস ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৫৭, ২১ মে ২০২৫

আপডেট: ১২:৫৯, ২১ মে ২০২৫

আইপিওতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য সুখবর: কোটা বাড়িয়ে ৬০ শতাংশ, আসছে আরও সংস্কার

প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) নিয়ে নতুন সুখবর পেলেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। শেয়ারবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের চূড়ান্ত সুপারিশ অনুযায়ী, আইপিওতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য কোটা ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬০ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে বাজারে তাদের অংশগ্রহণ ও আস্থা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

অন্যদিকে, যোগ্য (প্রাতিষ্ঠানিক) বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দ কমিয়ে ৪০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে যেখানে সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সমান বরাদ্দের সুপারিশ ছিল, সেখানে জনমতের ভিত্তিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রাধান্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।

টাস্কফোর্সের একজন সদস্য জানান, নিয়মের খসড়ার ওপর ৬০০ জনের বেশি মানুষের মতামত নেওয়া হয়েছিল। বেশিরভাগ মতামতই ছিল সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোটা বাড়ানোর পক্ষে। যদিও কেউ কেউ আইপিও অনুমোদন তিন বছরের জন্য বন্ধ রাখার মতো সুপারিশও করেছিলেন, যা আইনি কাঠামোর বাইরে হলেও টাস্কফোর্সের জন্য তা ছিল ‘চমকপ্রদ’।

বিএসইসির সূত্রে জানা গেছে, অতীতে বিভিন্ন সময়ে আইপিওর কোটা পরিবর্তন হয়েছে। খায়রুল হোসেন কমিশনের আমলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩০ শতাংশ, যা পরে শিবলী রুবাইত কমিশন ৭৫ শতাংশে উন্নীত করে। তবে সেই সময় কিছু আইপিওতে আন্ডারসাবস্ক্রিপশন দেখা দেয়।

নতুন সংস্কারে শুধু বরাদ্দ নয়, আইপিও প্রক্রিয়ার আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। যেমন:

  • বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের বিডিং সীমা ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হচ্ছে, যাতে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারে।

  • তালিকাভুক্তির পর প্রথম তিন দিনে ১০% সার্কিট ব্রেকার প্রযোজ্য থাকবে না, অতিরিক্ত মূল্য ওঠানামা নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে।

  • কাট-অফ প্রাইস থেকে কোনো ডিসকাউন্ট দেওয়া হবে না, যাতে ইস্যুকারী কোম্পানিগুলো প্রত্যাশিত প্রিমিয়াম পায়।

  • আইপিওতে আবেদনের জন্য ৫০ হাজার টাকার ন্যূনতম বিনিয়োগের শর্ত তুলে নেওয়া হবে।

শুধু তাই নয়, মানসম্পন্ন কোম্পানিগুলোর সরাসরি তালিকাভুক্তিকে উৎসাহিত করতে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি টার্নওভার রয়েছে এমন কোম্পানিগুলোর জন্য সরাসরি তালিকাভুক্তির সুযোগ থাকবে। এতে তাদের শেয়ার অফলোডের হার ১০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হবে, যা বাজারে লিকুইডিটি বাড়াবে।

অন্যদিকে, যেসব বড় কর্পোরেশনের ১ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ বকেয়া রয়েছে, তাদের জন্য তালিকাভুক্তি বাধ্যতামূলক করা হবে। এতে শেয়ারবাজারে স্বচ্ছতা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

আইপিওতে স্থির মূল্যের পদ্ধতিতে ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৫০ কোটি টাকা করা হবে। বুক বিল্ডিং পদ্ধতির ক্ষেত্রেও একই মানদণ্ড প্রযোজ্য হবে।

সব মিলিয়ে, এই সংস্কারগুলো বাজারের কাঠামোগত উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীর আস্থা এবং দীর্ঘমেয়াদে টেকসই প্রবৃদ্ধির পথ সুগম করবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। টাস্কফোর্সের এ উদ্যোগ শেয়ারবাজারে একটি নতুন যুগের সূচনা করতে পারে।