ঢাকা   সোমবার ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

’মেট্রোরেলে কমলাপুর যেতে আরও দুই বছর দেরি: দ্বিগুণ দর, অনিশ্চয়তায় যাত্রা’

’মেট্রোরেলে কমলাপুর যেতে আরও দুই বছর দেরি: দ্বিগুণ দর, অনিশ্চয়তায় যাত্রা’

ঢাকাবাসীর স্বপ্নের মেট্রোরেলে চড়ে সরাসরি কমলাপুরে পৌঁছানোর অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হচ্ছে। আগামী জুন মাসে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারিত অংশ চালুর কথা থাকলেও সেটি পিছিয়ে যাচ্ছে অনিশ্চয়তায়। ভারতীয় প্রতিষ্ঠান লারসন অ্যান্ড টুব্রুর প্রস্তাবিত দর প্রকল্প অনুমোদিত বাজেটের দ্বিগুণ হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার তা মেনে নিতে নারাজ। নতুন করে দরপত্র আহ্বান বা বিকল্প ঠিকাদারের সন্ধানে সময় গড়াচ্ছে, ফলে ২০২৫ সালেও এই সাড়ে এক কিলোমিটার পথ চালুর সম্ভাবনা ক্ষীণ।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উন্মুক্ত দরপত্র ছাড়াই ঠিকাদার নিয়োগের চেষ্টা করায় এই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। ভৌত নির্মাণকাজ কিছুটা এগোলেও রেললাইন, বিদ্যুৎ, সংকেত ও স্বয়ংক্রিয় ভাড়া আদায়ের মতো ইলেকট্রোমেকানিক্যাল কাজের জন্য এখনো কোনো কার্যকর সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসব কাজ সম্পন্ন করতে আরও দেড় থেকে দুই বছর লাগবে।

মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে মতিঝিল অংশ ইতিমধ্যে চালু হলেও দৈনিক যাত্রীর চাপ সামাল দিতে এবং কমলাপুর রেলস্টেশন ও আশপাশের মানুষকে সুবিধা দিতে সম্প্রসারিত অংশটি গুরুত্বপূর্ণ। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, প্রকল্পের বর্ধিত অংশে ভৌতকাজের অগ্রগতি এপ্রিল পর্যন্ত মাত্র ৫১ শতাংশ, যা পরিকল্পনার তুলনায় অনেক পিছিয়ে।

ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লারসন অ্যান্ড টুব্রু ২৭৪ কোটির কাজের প্রস্তাব দিয়েছে প্রায় ৬৪৫ কোটি টাকায়, যা প্রকল্প পরিচালনা কমিটির কাছে অগ্রহণযোগ্য হয়েছে। তারা বলেছে, উন্মুক্ত দরপত্র ছাড়া এমন অতিরিক্ত ব্যয়ে কাজ করানো যাবে না। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন, প্রতিযোগিতাহীনভাবে কাজ বরাদ্দ দিলে করদাতার টাকার অপচয় হবে।

কমলাপুর অংশের ভৌত নির্মাণের দায়িত্বে থাকা থাই কোম্পানি ইতাল-থাই ৫১১ কোটির চুক্তিতে কাজ করছে, তবে ইলেকট্রোমেকানিক্যাল অংশের দায়িত্বে একক দরদাতা থাকায় প্রকল্পটি স্থবির হয়ে আছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যাত্রীসেবার উন্নয়নে দেরি হলেও স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে ঠিকাদার নিয়োগই জনগণের স্বার্থে সঠিক সিদ্ধান্ত হবে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানিয়েছে, নতুন ঠিকাদার চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত কমলাপুর অংশের স্টেশন ও উড়ালপথ নির্মাণ শেষ হলেও তা ব্যবহার করা যাবে না।

এ অবস্থায় যাত্রীরা যেমন বাড়তি দুর্ভোগে পড়ছেন, তেমনি সরকারের নগর পরিবহন পরিকল্পনাও কার্যকরভাবে বাস্তবায়নে পিছিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত না হলে এই ছোট অংশ চালু করতেই চলে যেতে পারে পুরো আরও দুই বছর।