ঢাকা   বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

ঢাকায় কৃষকের বাজার, তাজা পণ্য হাতে পাবেন সরাসরি!

ঢাকায় কৃষকের বাজার, তাজা পণ্য হাতে পাবেন সরাসরি!

ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের জাতীয় সংসদ ভবনের বিপরীতে সেচ ভবনের পাশে রয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী একটি বাজার, যেখানে মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়াই সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পণ্য কিনতে পারেন ক্রেতারা। মাত্র ৩৪টি দোকান নিয়ে গঠিত এই বাজারে মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, নরসিংদী, সিরাজগঞ্জ, হবিগঞ্জ এমনকি খাগড়াছড়ির পাহাড়ি অঞ্চল থেকেও কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে আসেন।

তিন সপ্তাহ ধরে সিরাজগঞ্জ থেকে বাজারে পণ্য আনছেন খোকন তালুকদার। তিনি জানান, আশার একজন কর্মকর্তার কাছ থেকে এই বাজারের খবর পেয়ে প্রতিবেশীদের ফলানো লাউ, চালকুমড়া, করলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙে, কাঁচা মরিচসহ নানা সবজি নিয়ে ঢাকায় আসেন। শুক্রবার সকাল ১০টার মধ্যেই প্রায় ১০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি হয় তার।

হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে আসা বদু মিয়া কৃষিতে সাফল্যের জন্য বহুবার পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি এই বাজারে নিয়ে আসেন মৌসুমি শাকসবজি ছাড়াও লাল-হলুদ তরমুজ, সাম্মাম, বোম্বাই লিচু ইত্যাদি ফল।

নরসিংদীর শিবপুর থেকে আসা সদ্য ডিপ্লোমা শেষ করা নাঈম মিয়া তার এলাকার বিখ্যাত সাগর কলা, চম্পা কলা ও বাংলা কলা নিয়ে আসেন বাজারে। কলার প্রকারভেদে দাম প্রতি ডজন ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। ছাদবাগানকারীদের জন্য নিয়ে আসেন বস্তাভর্তি জৈব সার—দাম প্রতি কেজি ৩০ টাকা।

পূর্ব রাজাবাজারের নারী উদ্যোক্তা রেখা মিত্র নিজের হাতে তৈরি ২৬ রকমের আচার (আম, জলপাই, তেঁতুল, বরই, রসুন প্রভৃতি), আখের গুড়, চাকের মধু, তিল ও নারকেলের নাড়ু, লাল চিড়া, হাতে ভাজা মুড়ি, চিংড়ির বালাচাও এবং বরিশালের দেশি তেজপাতা বিক্রি করেন।

গাজীপুর থেকে আসা মাহফুজা আক্তার নিজের খামারের মাশরুম এবং তা দিয়ে তৈরি পণ্য যেমন চপ, পেঁয়াজু, পাঁপড় ও স্যুপের উপকরণ বাজারে বিক্রি করেন। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় কৃষকের বাজারসংলগ্ন চত্বরে আরও তিন–চারজন সবজি বিক্রেতার সঙ্গে বসেন তিনি।

যা যা কিনতে পারবেন:
এই বাজারে পাওয়া যায় মৌসুমি সব রকম শাকসবজি—লালশাক, পাটশাক, পুঁইশাক, কচুশাক। দাম ১০–৩০ টাকা। সবজির মধ্যে আছে ঝিঙে, চিচিঙ্গা, উচ্ছে, করলা, ঢ্যাঁড়স, পটোল, চালকুমড়া, বরবটি, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, ফুলকপি—দাম ৩০ থেকে ৬০ টাকা প্রতি কেজি। ছোট আকারের ৪টি ফুলকপি মাত্র ১০০ টাকা। দেশি পটোল, চীনা পটোল প্রতি কেজি ৪০ টাকা। পেঁয়াজ ৫৫ টাকা, কাঁচা হলুদ ১২০ টাকা কেজি। হাঁস-মুরগির ডিম বিক্রি হয় প্রতি ডজন ২৪০ টাকায়। গরুর মাংস পাওয়া যায় ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকায়। সকালে গেলে হাওর ও নদীর মাছও মেলে।

ফলমূল:
বোম্বাই লিচু ১০০টি ২০০ টাকা, কাঁচা টক আম ৩০–৪০ টাকা, কাঁচামিঠা আম ১২০ টাকা, পেঁপে-বাঙ্গি ৪০–৫০ টাকা, তরমুজ ৫০ টাকা কেজি, আনারস ৪০ টাকা, কাঁঠাল প্রতিটি ৭০০–১,০০০ টাকা, ছোট বেল প্রতিটি ৫০–১০০ টাকা এবং বড় বেল ৪০০ টাকা পর্যন্ত।

এ বাজার শুধু একটি কেনাকাটার জায়গা নয়, বরং একটি পরিবেশবান্ধব ও কৃষকবান্ধব প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ভরসা, সততা ও পণ্যের গুণগত মান—সবই একসাথে পাওয়া যায়।