
মার্জিন ঋনে কড়াকড়ি আরোপের খবরে ফের অস্থিরতা নেমেছে শেয়ারবাজারে। দিনের বেশিরভাগ সময় সূচক ইতিবাচক প্রবণতায় থাকলেও শেষ ঘণ্টায় বড় ধরণের বিক্রির চাপ তৈরি হয়। লেনদেন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক আজ প্রায় ৩১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৭৯ পয়েন্টে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন শর্ত বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাজারে ওঠানামার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। টানা সাত দিন পতনের পর ডিএসইর সূচক ২২২ পয়েন্ট হারায়। এরপর টানা তিন দিন ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ১০৫ পয়েন্ট পুনরুদ্ধার করে। তবে স্থিতিশীল হতে না হতেই ফের অস্থিরতার ঘূর্ণিপাকে পড়ে বাজার। মঙ্গলবার সূচক কমে ৯ পয়েন্ট, আর বুধবার পতন আরও তীব্র হয়ে সূচক নেমে যায় প্রায় ৩১ পয়েন্ট।
বাজারের এই অস্থিরতার পেছনে মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন মার্জিন ঋণ নীতিকে। মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) বিএসইসি প্রকাশিত “মার্জিন বিধিমালা (রহিতকরণ), ২০২৫”-এর খসড়া অনুসারে, শেয়ার কেনার জন্য মার্জিন ঋণ পেতে একজন বিনিয়োগকারীর বছরে গড়ে কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে। অর্থাৎ ছোট বিনিয়োগকারীদের জন্য মার্জিন সুবিধা পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।
এছাড়া, যাদের আয়ের নির্দিষ্ট উৎস নেই—যেমন ছাত্র, গৃহিণী বা অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি, তারা আর মার্জিন ঋণ নিতে পারবেন না। কমিশনের মতে, এ ধরনের বিনিয়োগকারীদের সীমিত আর্থিক সক্ষমতা তাদেরকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়। ফলে সুরক্ষার স্বার্থেই এ ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে বলে বিএসইসি জানিয়েছে।
তবে নতুন নীতিমালা নিয়ে বিনিয়োগকারী মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এতে স্বল্প আয়ের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে ধীরে ধীরে সরে দাঁড়াবেন, ফলে তারল্য সংকট আরও বাড়তে পারে। অন্যদিকে, বাজারসংশ্লিষ্ট আরেক অংশ মনে করছে, সীমিত আয়ের বিনিয়োগকারীদের ঋণ নির্ভর শেয়ার কেনাকাটা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে বাজার স্থিতিশীল হতে পারে।
উল্লেখ্য, বিএসইসি ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মার্জিন ঋণের প্রস্তাবে জনমত গ্রহণ করবে। এরপর প্রস্তাবিত খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করবে। এখন বাজারজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলো—এই বিধিমালা কার্যকর হলে বাজারে ছোট বিনিয়োগকারীদের অবস্থান কীভাবে প্রভাবিত হবে।
বুধবারের বাজার পর্যালোচনা
আজ ডিএসইতে দিনশেষে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩১.৪৮ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৩৭৯.৪১ পয়েন্টে নেমে আসে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস কমেছে ১১.৯২ পয়েন্ট নেমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৭৭.৬৭ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক হারিয়েছে ১৮.৫৫ পয়েন্ট, অবস্থান করছে ২ হাজার ৮৬.২২ পয়েন্টে।
এদিন ডিএসইতে মোট ৩৯৮টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে ১২৪টির দর বেড়েছে, ২২৩টির দর কমেছে এবং ৫১টির দর অপরিবর্তিত ছিল। তবে টাকার অঙ্কে লেনদেন কমে দাঁড়িয়েছে ৯৫৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, যা আগের কার্যদিবসের ১ হাজার ৩৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকার তুলনায় প্রায় ৮৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা কম।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) আজ লেনদেন হয়েছে মাত্র ৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট, যা আগের দিনের ১৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা থেকে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এদিন সিএসইতে অংশ নেয় ২২৮টি কোম্পানি। এর মধ্যে ৯১টির দর বেড়েছে, ১১২টির দর কমেছে এবং ২৫টির দর অপরিবর্তিত ছিল।
দিনশেষে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৮০.৭২ পয়েন্ট কমে ১৫ হাজার ৮৫.৪২ পয়েন্টে নেমে আসে। এর আগের কার্যদিবসে সূচক কমেছিল ১৫.২৭ পয়েন্ট।